এখনও শেষ হয়নি, নির্ধারিত সময় শেষ, তাই স্থগিত করা হয়েছে সকল কাজ। এখন প্রশ্ন- এ প্রকল্পের মেয়াদ আবার বাড়িয়ে কাজ শেষ করা হবে, নাকি এখানেই থেমে যাবে সব?
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, প্রকল্পটি শেষ করতে গাজীপুর থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার দীর্ঘ বিআরটি প্রকল্প। ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে মেয়াদ শেষে অগ্রগতি প্রতিবেদনে দেখানো হয় ৯৭.৪৭ শতাংশের কাজ শেষ হয়েছে। যার মধ্য ২৫টি স্টেশন, একটি বাস ডিপো, সাতটি ফ্লাইওভার, ফুটপাথ ও ১৯টি ফুটওভার ব্রিজ রয়েছে। তবে বাস্তবে এর চিত্র অনেক আংশেই উল্টো। স্টেশনগুলোর অবস্থা একেবারেই নাজেহাল।
সময়সীমা ও ব্যয়ের দিক থেকে একের পর এক রেকর্ড গড়েছে প্রকল্পটি। ২০১২ থেকে ২০১৬ মেয়াদি এই প্রকল্পের প্রাথমিক বাজেট নির্ধারিত হয় দুই হাজার ৪০ কোটি টাকা। পরে দ্বিতীয় দফায় তা বেড়ে দাঁড়ায় চার হাজার ২৬৮ কোটি টাকায়। ২০১৯ সালে কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও পাঁচবার সময় বাড়িয়েও ২০২৪ সালে শেষ হয়নি প্রকল্পটি। যদিও ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে জানানো হয়, কাজ বাকি মাত্র দুই শতাংশ। এসময় ১০টি বিআরটিসি বাস দিয়ে পাইলট প্রকল্প চালু করা হয়।
এরপর ২০২৫ এর জুনে প্রকল্পটি পুরোদমে চালুর কথা থাকলেও তা তো হয়ইনি, উল্টো পাঁচ মাস পর বন্ধ হয়ে গেছে পাইলট প্রকল্পও। অবৈধ গাড়ি পার্কিং ও জায়গা দখল করে গ্যারেজে কাজ করতেও দেখা যায় স্টেশেনে।
স্থানীয়দের মধ্যে একজন বলেন, ‘এখানে গাড়ি রাখা যাবে না। সেই সাইনবোর্ড আছে কিন্তু এটা তদারকি করার লোক নেই।’
চার হাজার কোটি টাকার এই প্রকল্প প্রয়োজন আরও তিন হাজার কোটি টাকা। যেখানে সপ্তম দফায় প্রকল্পের মেয়াদ বাড়তে পারে ২০২৯ সাল পর্যন্ত। তাহলে একক প্রকল্পেই ব্যয় দাঁড়াবে প্রায় সাত হাজার কোটি টাকা, আর মেয়াদ হবে ১৭ বছর। প্রশ্ন ওঠে, এত দীর্ঘ এই প্রকল্পের ভবিষ্যৎ কী?
এই প্রশ্নগুলোর উত্তর জানতে যাই প্রকল্প পরিচালক রেজাউল করিমের কার্যালয়ে। প্রকল্প অফিসে পাওয়া যায়নি তাকে। একাধিকবার ফোন করার পর তিনি ফোন ধরলেও কথা বলতে অনিচ্ছা প্রকাশ করেন।
রেজাউল করিম বলেন, ‘কথা বলা সম্ভব না। আমি অসুস্থ, জ্বর।’
জানা যায়, মেয়াদ শেষ হওয়ায় তিনি বরিশালে অন্য দায়িত্বে আছেন, একইসঙ্গে থেকে গেছেন বিআরটি প্রকল্পতেও।
তবে বাস্তবায়নকারী কর্মকর্তারা জানান, এই প্রকল্পের অবকাঠামোর কাজ শেষে হওয়ার অপেক্ষায়। শেষ হলেই প্রথম ধাপে ৫০টি এবং পরে ১৮৭টি বাস দিয়ে ধাপে ধাপে বিআরটি লেনে বিশেষায়িত বাস চালু করা পরিকল্পনা রয়েছে।
ঢাকা বিআরটির মহাব্যবস্থাপক মো. মহিউদ্দিন বলেন, ‘বাসের যে চলমান প্রক্রিয়া, সেটা যদি অনুমোদন পাই তাহলে ২০২৬ এর মধ্যেই অপারেশনে চলে যাওয়া সম্ভব।’
তবে বাস্তবায়নকারী কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক সম্প্রতি দায়িত্ব পাওয়ায় অনেক তথ্যই জানেন না বলে প্রকল্পের অগ্রগতি না হওয়ার দায় এড়িয়ে যান।
বিশেষজ্ঞদের একটি পক্ষ বলছে, প্রকল্পটি আদৌ শেষ করা সম্ভব কি না তা নতুনভাবে মূল্যায়ন করা দরকার। না হলে ব্যয়ের সাথে বাড়বে ভোগান্তিও। আর অপর পক্ষে আশা, বিআরটি চালু করতে পারলে মেট্রোরেলের মতো সুবিধা পাবে নগরবাসী।
যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ ড. শামসুল আলম বলেন, ‘এই খণ্ডিত বিআরটি পৃথিবীর কোথাও পপুলার হয়নি। সুতরাং এটাও হবে না। আমার হিসাবে, নতুন বিনিয়োগ করা এটা গচ্চা দেয়া।’
যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ মাহবুবুল বারি বলেন, ‘এটা তো ভালো সিস্টেম। এমআরটির মতোই, পনি আধা ঘণ্টায় গাজীপুর থেকে মহাখালি চলে যাবেন। সেটা কি ভালো না?’
প্রকল্পের শতভাগ শেষ হয়েছে ড্রেন, সাতটি ফ্লাইওভার, ১০ লেনের টংগী ব্রিজ ও দুটি ফুটওভার ব্রিজ।