কক্সবাজার সৈকতে কৃত্রিম খাল; সৌন্দর্যহানি ও দূষণে ক্ষুব্ধ পর্যটক-স্থানীয়রা

কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে তৈরি কৃত্রিম খাল
কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে তৈরি কৃত্রিম খাল | ছবি: এখন টিভি
0

সৈকতের প্রাকৃতিক গঠন রক্ষা ও পরিবেশ সুরক্ষার কথা বলা হলেও বাস্তবতা ভিন্ন। কক্সবাজারের কলাতলীতে সৈকতের বালিয়াড়ি কেটে তৈরি করা হয়েছে একটি কৃত্রিম খাল, যা গত কয়েকদিনের বৃষ্টিতে পরিণত হয় প্রবল পানিপ্রবাহের ঝুঁকিপূর্ণ পথে। এই খাল দিয়ে হোটেল-মোটেল জোনের ময়লা পানি সরাসরি গিয়ে মিশছে সমুদ্রে। এ ঘটনায় পর্যটক ও স্থানীয়দের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। খালের কারণে সৈকতে ঘুরতে এসে অনেকেই পড়ছেন বিড়ম্বনায়। নিরাপত্তার পাশাপাশি সৌন্দর্যহানি নিয়েও হতাশা প্রকাশ করছেন তারা।

পরিবেশবাদীরা বলছেন, এতে যেমন দূষিত হচ্ছে প্রকৃতি, তেমনি পর্যটকদের জন্য তৈরি হচ্ছে প্রাণঘাতী এক ফাঁদ। যদিও প্রশাসন বলছে, এ ধরনের কার্যক্রম বন্ধে নির্দেশনা রয়েছে এবং কেউ আইন লঙ্ঘন করলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

কক্সবাজারের কলাতলীর সমুদ্রসৈকতে ডিভাইন ইকো রিসোর্টের পাশ ঘেঁষে কাটা হয়েছে বালিয়াড়ি। কয়েকদিন আগে সেখানে তৈরি করা হয়েছে একটি কৃত্রিম খাল, যা এখন রীতিমতো একটি স্থায়ী পানি চলাচলের পথ। গত কয়েকদিন ধরে এই খাল দিয়েই হোটেল-মোটেল জোনের বর্জ্য ও দূষিত পানি মিশে যাচ্ছে সরাসরি সমুদ্রে।

স্থানীয়রা বলছেন, কয়েকবছর আগেও এ এলাকায় পানি স্বাভাবিকভাবে প্রবাহিত হতো পাশের একটি ছড়ার মাধ্যমে। সেটি প্যাসিফিক বিচ লাউঞ্জ ক্যাফের সামনে দিয়ে গিয়ে মিশতো সাগরে। সম্প্রতি অতিথিদের চলাচলের সুবিধার্থে ছড়াটি বালুর বস্তা দিয়ে বন্ধ করে দেয় ক্যাফে কর্তৃপক্ষ। তখন থেকেই জমা পানির চাপে ডিভাইনের সামনে ও পাশে তৈরি হয় গভীর ডোবা।

এরপর সেই পানি নিষ্কাশনে বালিয়াড়ি কেটে তৈরি করা হয় এই খাল। ফলে বৃষ্টির পানি, জোয়ার-ভাটা এবং ঢলের সময় এটি রূপ নেয় প্রবল স্রোতের এক বিপজ্জনক পথে। কয়েক দিনেই খালটি হয়ে উঠেছে আরও চওড়া, গভীর।

প্যাসিফিক বিচ লাউঞ্জ ক্যাফের জেনারেল ম্যানেজার জাবেদ ইকবাল বলেন, ‘সুয়েজের পানি যখন শুকায় তখন বিশ্রী গন্ধ হয়ে যায়। হোটেলের যত সুয়েজের লাইন এটা দিয়ে সমুদ্রে নামে। পর্যটকদের চলাচলে সমস্যা হয়।’

ডিভাইন ইকো রিসোর্টের মালিকপক্ষের প্রতিনিধি মোহাম্মদ সেলিম বলেন, ‘এখানে যে প্লটগুলো আছে, প্লটের পানি ব্রিজের নিচ দিয়ে এসে এদিক দিয়ে চলে আসে। অনেক বৃষ্টির কারণে পানি একদম জমে গেছে।’

পর্যটক ও স্থানীয়রা জানান, বিভিন্ন আবাসিক ও কলকারখানার পানি এসে সমুদ্রে মিশে যাচ্ছে। সমুদ্রের পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। এই নালা আমরা এখানে আশা করি নি। এই পানিটা অনেক ময়লা।

এদিকে পরিবেশবাদীরা বলছেন, সৈকতের আশপাশে গড়ে তোলা অনেক স্থাপনা এখনও যুক্ত করা হয়নি শহরের মূল ড্রেনেজ ব্যবস্থার সাথে। এমন প্রেক্ষাপটে অপরিকল্পিত, কৃত্রিম খালের কারণে সৈকতের স্বাভাবিক গঠন বিপর্যস্ত হচ্ছে। দূষণ ছড়াচ্ছে সমুদ্রজুড়ে, আর গুপ্তখাল থেকে তৈরি হচ্ছে সমুদ্রস্নানে নিরাপত্তা ঝুঁকি বা প্রাণঘাতী ফাঁদ।

কক্সবাজার বন ও পরিবেশ সংরক্ষণ পরিষদের সভাপতি দীপক শর্মা দীপু বলেন, ‘কৃত্রিম খাল খনন করার জন্য এর স্রোত সমুদ্রে যাচ্ছে। যেই সমুদ্রে যাচ্ছে এখানে একটি গুপ্তখাল সৃষ্টি হচ্ছে। যা সমুদ্রের ভেতর দেখা যায় না। পর্যটকরা এটা না জেনেই ওই জায়গায় গোসল করছে। ফলে তারা জীবনঝুঁকিতে পড়ছেন।’

জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, হোটেল মোটেল জোনের পানি নিষ্কাশন ও পরিবেশ সুরক্ষার দায়িত্ব কক্সবাজার পৌরসভার। তবে কেউ যদি পরিবেশ আইন লঙ্ঘন করে থাকে, তাহলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহ্উদ্দিন বলেন, ‘কক্সবাজার জেলা প্রশাসক আছে, কক্সবাজার পৌরসভা আছে তাদের ভিজিলেন্স টিম কাজ করছে। অবৈধ পন্থায় কেউ যদি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করে তাহলে এটি উভয় কর্তৃপক্ষের দেখার সুযোগ রয়েছে। জেলা প্রশাসক বিষয়টি তদারকি করবেন।’

বাণিজ্যিক স্বার্থে তৈরি করা এই কৃত্রিম খাল শুধুই পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণ নয় এটি হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে কক্সবাজারের পর্যটন নিরাপত্তা, সৌন্দর্য ও দীর্ঘমেয়াদি টেকসই ভবিষ্যতের জন্য।

ইএ