যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায় চট্টগ্রাম বন্দরে প্রথম তেজস্ক্রিয়তা শনাক্তকরণ যন্ত্র স্থাপন হয় ২০১১ সালে। এরপর গত ১১ বছরে ৪৬টি কনটেইনারে তেজস্ক্রিয়তা শনাক্ত হয়েছে। এরইমধ্যে বেশ কিছুতে ছিলো উচ্চ মাত্রার শক্তিশালী আইসোটোপ; যা পরিবেশ এবং মানবস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।
দেশে প্রথম তেজস্ক্রিয় পদার্থ ধরা পড়ে ২০১৪ সালে। ভারতে রপ্তানির জন্য পাঠানো স্টেইনলেস স্টিলের স্ক্র্যাপ কলম্বো বন্দরে আটকানোর পর কনটেইনারটি ফেরত পাঠানো হয় চট্টগ্রাম বন্দরে।
২০২৩ সালে প্রতি ঘণ্টায় ২ লাখ ৮০ হাজার মাইক্রোসিয়েভার্টস মাত্রার আরও একটি শক্তিশালী তেজস্ক্রিয় পদার্থ শনাক্ত করে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের রেডিয়েশন ডিকেটশন স্ক্যানার। গত এক বছরে এমন কয়েকটি কনটেইনারে ধরা পড়েছে তেজস্ক্রিয়তা। সবশেষ গত ৬ আগস্ট ব্রাজিল থেকে আসা একটি ধাতব স্ক্র্যাপের কনটেইনারে শনাক্ত হয় তেজস্ক্রিয় পদার্থ।
আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, আমদানি হওয়া পণ্যে তেজস্ক্রিয়তা মিললে উৎস দেশে ফেরত পাঠানোর নিয়ম। চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের তথ্যমতে, দু একটি ছাড়া নানা জটিলতায় বাকী তেজস্ক্রিয় দুষণযুক্ত পণ্য ফেরত পাঠানো যায়নি। ফলে এসব তেজস্ক্রিয় পদার্থ নিষ্পত্তির জন্য আমদানিকারককে বহন করতে হচ্ছে বিপুল অংকের অর্থ। আর ধ্বংস সম্ভব না হওয়ায় নিরাপদে সংরক্ষণে পরমাণু শক্তি কমিশনকে পোহাতে হচ্ছে নানা ঝামেলা।
মেগাপোর্ট ইনিশিয়েটিভ-এনএসডিডি প্রকল্প ব্যবস্থাপক মানস পাল বলেন, ‘পরমাণু শক্তি কমিশন ডিসপোজের জন্য নিয়ে গেলে অনেক বছর শিল্ড করে রাখতে হয়। এতে তাদের ঝামেলা হয়। আমাদের দেশের ইম্পোটারদেরও ডিসপোজ চার্জ দিতে হয়। এতে তাদের খরচ বেড়ে যায়।’
স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ এ তেজস্ক্রিয় পদার্থ সংরক্ষণ করাটাও জটিল প্রক্রিয়া। পরমাণু বিজ্ঞানীরা বলছেন, আমদানি নীতিতে শিল্প পণ্যে তেজস্ক্রিয়তার বিষয়ে সুনির্দিষ্ট নীতি নেই। ফলে এ সুযোগে রপ্তানিকারক বা সংশ্লিষ্ট দেশ অনেক সময় পার পেয়ে যায়।
বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন সাবেক চেয়ারম্যান ড. মাসুদ কামাল বলেন, ‘আমদানি নীতিতে সুনির্দিষ্ট করে কিছু বলা নেই। তবে আন্তর্জাতিক নীতি অনুযায়ী যে দেশ থেকে এসেছে সে দেশে ফেরত পাঠানোর নিয়ম।’
মেগাপোর্ট ইনিশিয়েটিভ-এনএসডিডি প্রকল্প ব্যবস্থাপক মানস পাল বলেন, ‘আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি কমিশন চাইলে এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে পারেন।’
তেজস্ক্রিয় দূষণ থেকে বন্ধ্যাত্ব, বিকলাঙ্গ সন্তান জন্ম , মানসিক বৈকল্য ,ক্যান্সারসহ হতে পারে নানা রোগ। সবশেষ ব্রাজিল থেকে আসা ধাতব পণ্যের তেজস্ক্রিয়তা পাওয়ার বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে পরমাণু শক্তি কমিশনের কর্মকর্তারা জানান, পুরো বিষয়ে বিস্তারিত জানার পর আইন অনুযায়ী পদক্ষেপ নেয়া হবে।