৯০ দশকের শুরুতে টাঙ্গাইলের সখীপুরের গড়বাড়ী, সুরীরচালা, গোবরচাকা, চাকদহ ও ইন্দাজানি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণ করা হয়। কয়েক দফা সংস্কারের পরও অল্প দিনের মধ্যেই জরাজীর্ণ হয়ে পড়ায় বিদ্যালয়গুলো পরিত্যক্ত ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ।
গেল মাসে সুরীরচালা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ক্লাস চলার সময় ছাদ থেকে পলেস্তারা খসে পড়ে এক শিক্ষার্থী আহত হয়। এরপর ওই ভবনটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করে পাশের মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের একটি পুরনো টিনশেড ঘরে চলছে ক্লাস। তবে অন্য চার স্কুলে এখনো পরিত্যক্ত ভবনেই পাঠদানে বাধ্য হচ্ছেন শিক্ষকরা।
শিক্ষকরা জানান, তারা আতঙ্কে আছেন, কেননা যেকোনো মুহূর্তে ঘটতে পারে দুর্ঘটনা। কর্তৃপক্ষের কাছে দ্রুত কোনো পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বানও জানান কেউ কেউ।
অভিভাবকরা বলছেন, এলজিইডির নিম্নমানের কাজের কারণেই মাত্র তিন দশকে পরিত্যক্ত হয়ে পড়েছে ভবনগুলো। সন্তানদের স্কুলে পাঠিয়ে সব সময় আতঙ্কে থাকেন তারা।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকরা বলছেন, কয়েক বছর পর পর বিদ্যালয়ের ভবনগুলো সংস্কার করা হয়েছে। তারপরও কোনো কাজ না হওয়ায় ঝুঁকি নিয়েই ক্লাস করতে বাধ্য হচ্ছেন তারা। এতে কমছে উপস্থিতি, আতঙ্ক নিয়েই চলছে পড়াশোনা।
উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তারা জানান, উপজেলার ১৪৭টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ৫টি ঝুঁকিপূর্ণ। এদিকে বরাদ্দ পেলে দ্রুত নতুন ভবন নির্মাণ করা হবে বলেও জানান তিনি।
আরও পড়ুন:
সখীপুর উপজেলা শিক্ষা অফিসার খোরশেদ আলম বলেন, ‘ভবনটি পাঠদানের উপযুক্ত কি না তার প্রতিবেদন আমরা চেয়েছি। ওই প্রতিবেদন পাওয়ার পরই আমরা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে জানাবো।’
সখীপুর উপজেলা প্রকৌশলী মো. আরিফুর রহমান বলেন, ‘দু’টি বিদ্যালয়ের নতুন ভবন নির্মাণের জন্য সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় উন্নয়ন প্রকল্পের প্রাথমিক প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে এরই মধ্যে। এর অনুমোদন হলে নতুন ভবন নির্মাণ করা সম্ভব হবে।’
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সঠিকভাবে কাজ হলে সরকারি ভবন প্রায় ১০০ বছর টেকসই হতে পারে। সুষ্ঠু শিক্ষার জন্য শিশুদের নিরাপদ ঝুঁকিমুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করার আহ্বান শিক্ষাবিদদের।
টাঙ্গাইলের জেলা শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ইশতিয়াক ইকবাল হিমেল বলেন, ‘যেকোনো স্কুল, কলেজ বা আরসিসি কাঠামো সাধারণত ৫০ থেকে ১০০ বছরের পার্সপেক্টিভ বিবেচনা করে ডিজাইন করা হয়। তবে এটা নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ করতে হয়।’
মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এসএম সাইফুল্লাহ বলেন, ‘যে বাচ্চা স্কুলে যাচ্ছে সে যেন মনে করে, তার জন্য যে বসত ভিটার চেয়েও তার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বেশি নিরাপদ।’
তবে টাঙ্গাইল জেলার কতগুলো বিদ্যালয় ঝুঁকিপূর্ণ তার সুনির্দিষ্ট তথ্য দিতে পারেননি জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা।