বাংলাদেশে ২৪ শতাংশ ঋণ ইচ্ছাকৃত খেলাপির দখলে

বাংলাদেশ ব্যাংকের লোগো
বাংলাদেশ ব্যাংকের লোগো | ছবি: সংগৃহীত
0

ইচ্ছাকৃত ঋণ খেলাপিতে জড়িত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক শনাক্ত করতে পারলেও কোনো ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন সাধারণ আমানতকারী, সৎ ঋণগ্রহীতাসহ ব্যাংকগুলোও। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, মোট বিতরণ করা ঋণের ২৪ দশমিক ১৩ শতাংশ ইচ্ছাকৃত খেলাপিদের হাতে। অন্যদিকে অর্থনীতিবিদদের মত, ইচ্ছাকৃত খেলাপিদের শাস্তি নিশ্চিতে নীতিমালার পাশাপাশি বাড়াতে হবে নজরদারি।

সামর্থ্য থাকার পরও অনেকের ঋণ পরিশোধ না করায় নানা সংকটে জর্জরিত ব্যাংক খাত অনেকটাই ধুকছে। এরইমধ্যে ইচ্ছাকৃত খেলাপিতে রেকর্ড গড়েছে ৩৫টি ব্যাংক।

ইচ্ছাকৃত খেলাপিতে দুর্বল হয়ে পড়া ব্যাংকিং কাঠামোয় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন সাধারণ আমানতকারী, সৎ ঋণগ্রহীতাসহ ব্যাংকগুলো। কেন্দ্রীয় ব্যাংকে এরই মধ্যে ৩৫টি ব্যাংক তাদের ইচ্ছাকৃত খেলাপিদের তালিকাও দিয়েছে। এসব খেলাপি গ্রাহকের কাছে আটকে আছে দুই লাখ কোটি টাকারও বেশি।

বিগত সরকারের আমলে খাদের কিনারায় পড়া ব্যাংক খাতের বিভিন্ন সূচকের তথ্য গোপন করায় সমানে আসেনি বহু তথ্য। অন্তর্বর্তী সরকার এ খাতের প্রকৃত তথ্য সামনে আনার সিদ্ধান্তে উঠে এসেছে-- প্রভাবশালী গ্রুপের খেলাপি তালিকাও। এরইমধ্যে আমানতকারীদের আস্থা ফেরাতে দুর্বল ব্যাংকগুলোকে নিয়ে কাজ করছে সরকার।

অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘ব্যাংক নিয়ে কাজ করা একটু সময়ের ব্যাপার। মানে দুর্বল ব্যাংক কী করবে এগুলো। আরেকটা জিনিস হলো কী, ব্যাংকের যারা ডিপোজিটর তাদের টাকা দিতেই হবে।’

এখন টিভির হাতে আসা নথিতে দেখা যায়, চতুর্থ প্রজন্মের ইউনিয়ন ব্যাংক থেকে নেয়া ১১৯ জন ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিতে যুক্ত। এসব গ্রাহকের কাছে আটকে আছে ছয় হাজার ২৯৯ কোটি টাকা। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে- খেলাপিদের তালিকা ব্যাংকগুলো থেকে চাওয়া হলেও দিতে নারাজ অনেকে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বলেন, ‘এতদিনে আমরা অনেকভাবে ঋণখেলাপি বা ঋণখেলাপি হওয়ার যোগ্য ঋণকে নিয়মিত ঋণ হিসেবে প্রদর্শন করে আসছি। কিছু ব্যাংক মার্জ হবে এমন গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। সেটা যদি বাস্তবায়ন হয়, সেক্ষেত্রেও ব্যাংকের স্টাফ এবং ক্ষুদ্র গ্রাহকদের স্বার্থকে বিবেচনায় নিয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।’

২০২৪ সালের মার্চে ইচ্ছাকৃত খেলাপিদের শাস্তির জন্য একটি নীতিমালা জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। সেই অনুযায়ী ব্যাংকগুলো ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি ইউনিট গঠন করে ২০২৪ সালের ৩০ জুন-ভিত্তিক খেলাপি ঋণের হিসাব ধরে চিহ্নিত করার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। এটিকে সময়োপযোগী বলছেন গবেষকরা। পাশাপাশি ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদের শাস্তির আওতায় আনার তাগিদ দিয়েছেন।

চেঞ্জ ইনিশিয়েটিভ রিসার্চ ফেলো ও অর্থনীতিবিদ এম হেলাল আহমেদ জনি বলেন, ‘ইচ্ছাকৃত খেলাপি যেগুলো এবং তাদের সম্পদ, তারা যেটা জামানত রেখেছিল সেগুলো আইনের মধ্যে থেকে টেন্ডার করে সেগুলো বিক্রি করে দিতে পারে। ব্যাংকগুলোকে মার্জ করার ব্যাপারেও যে সরকার চিন্তা করেছে, সেটাও যদি করা হয় ওই সাধারণ গ্রাহকগুলো আবারও সেই ব্যাংকমুখী হবে।’

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দেয়া তথ্য বলছে, গত ১৫ বছরে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বিপজ্জনক হারে বেড়েছে। ২০০৯ সালে যেখানে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল মাত্র ২২ হাজার কোটি টাকা, তা রেকর্ড পরিমাণে বেড়ে এখন দাঁড়িয়েছে চার লাখ ২০ হাজার ৩৩৫ কোটি টাকায়। যা প্রায় ১৫ গুণেরও বেশি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, মোট বিতরণ করা ঋণের ২৪ দশমিক এক তিন শতাংশ ইচ্ছাকৃত খেলাপিদের হাতে। এর মধ্যে আদায় অযোগ্য অর্থাৎ ব্যাড লোনের পরিমাণ তিন লাখ ৪২ হাজার ৬৫ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের প্রায় ২০ শতাংশ।

এসএস