আরও পড়ুন:
একনজরে বাংলাদেশ ব্যাংকের ছেঁড়া টাকা বিনিময়ের নতুন নীতিমালা ২০২৫
- বিনিময় মূল্য: নোটের ৯০ শতাংশ বা তার বেশি অংশ অক্ষত থাকলে ১০০% বা পুরো দাম পাওয়া যাবে।
- কোথায় বদলাবেন: দেশের যেকোনো বাণিজ্যিক ব্যাংকের যেকোনো শাখা থেকে এই টাকা বদলানো যাবে।
- তাৎক্ষণিক সেবা: ৯০% এর বেশি অংশ ঠিক থাকলে ব্যাংক শাখা সাথে সাথেই নতুন টাকা দিতে বাধ্য।
- দাবিযোগ্য নোট: যদি নোটের অংশ ৯০ শতাংশের কম থাকে, তবে আবেদন করে তা ব্যাংকে জমা দিতে হবে (বিনিময় মূল্য ৮ সপ্তাহের মধ্যে জানানো হবে)।
- অস্বীকার করলে ব্যবস্থা: কোনো ব্যাংক শাখা টাকা নিতে অনীহা প্রকাশ করলে বাংলাদেশ ব্যাংকের হটলাইন ১৬২৩৬-এ অভিযোগ করা যাবে; সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
- আগুনে পোড়া টাকা: এটি সরাসরি ব্যাংক বদলাবে না, গ্রাহককে বাংলাদেশ ব্যাংকের শাখায় আবেদন করতে হবে।
- নোটিশ বোর্ড: প্রতিটি ব্যাংক শাখায় ‘ছেঁড়া-ফাটা নোট বিনিময় করা হয়’ এমন নোটিশ ঝোলানো বাধ্যতামূলক।
কোথায় বদলানো যাবে ছেঁড়া টাকা? (Where to Exchange)
নতুন নীতিমালা অনুযায়ী, গ্রাহকদের সুবিধার্থে এখন থেকে যেকোনো ব্যাংকের যেকোনো শাখা (Any Branch of Any Bank) থেকে এই সেবা দিতে হবে। আগে কেবল কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মাধ্যমে এই সেবা পাওয়া যেত, কিন্তু এখন সব বাণিজ্যিক ব্যাংকের প্রতিটি শাখাকে ছেঁড়া বা ত্রুটিযুক্ত নোট বদলানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যদি কোনো ব্যাংক শাখা এই সেবা দিতে অনীহা প্রকাশ করে (Refusal to provide service), তবে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রতিটি ব্যাংক শাখায় স্পষ্ট স্থানে ‘ছেঁড়া-ফাটা বা ত্রুটিপূর্ণ নোট বিনিময় করা হয়’ (Mutilated notes are exchanged here) মর্মে নোটিশ ঝোলাতে হবে।
ছেঁড়া-ফাটা বা ত্রুটিপূর্ণ নোট ৯০ শতাংশের কম ঠিক থাকলে কী হবে? (Less than 90% Intact)
যদি কোনো নোটের ৯০ শতাংশের কম অংশ বিদ্যমান থাকে, তবে সেটিকে ‘দাবিযোগ্য’ (Claimable Note) হিসেবে গণ্য করা হবে। এক্ষেত্রে ব্যাংক আপনাকে তাৎক্ষণিক টাকা দেবে না। গ্রাহককে একটি আবেদন (Application) জমা দিতে হবে, যা ব্যাংক কেন্দ্রীয় ব্যাংকে পাঠাবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন সাপেক্ষে সর্বোচ্চ ৮ সপ্তাহের মধ্যে (Within 8 Weeks) গ্রাহক তার টাকা বা বিনিময় মূল্য ফেরত পাবেন।
আরও পড়ুন:
নোটের অবস্থা অনুযায়ী বিনিময়ের গাণিতিক হিসাব (Mathematical Rules of Exchange)
নোটের কত অংশ ঠিক থাকলে আপনি কত টাকা পাবেন, তা নির্দিষ্ট করা হয়েছে:
৯০% এর বেশি অক্ষত: ১০০% বা পুরো দাম পাবেন (তাৎক্ষণিক)।
৯০% বা তার কম অংশ বিদ্যমান: একে বলা হবে ‘দাবিযোগ্য নোট’ (Claimable Note)। এক্ষেত্রে ব্যাংক সরাসরি টাকা দেবে না। আবেদন গ্রহণ করে বাংলাদেশ ব্যাংকে পাঠাবে এবং ৮ সপ্তাহের মধ্যে (Within 8 Weeks) ফলাফল জানাবে।
একাধিক খণ্ড: যদি একটি নোট একাধিক খণ্ডে বিভক্ত থাকে এবং সেটির ৯০% এর বেশি অংশ গ্রাহক উপস্থাপন করতে পারেন, তবেই সেটি গ্রহণ করা হবে।
নোটের ধরণ ও পাঁচ শ্রেণি (Types of Currency Notes)
বাংলাদেশ ব্যাংক নোটের ব্যবহারযোগ্যতার ওপর ভিত্তি করে সেগুলোকে পাঁচটি শ্রেণিতে (Five Categories) ভাগ করেছে:
- পুনঃ প্রচলনযোগ্য (Re-issuable Notes) – যা বাজারে চলবে।
- অপ্রচলনযোগ্য (Non-issuable Notes) – যা ব্যবহারের অনুপযোগী।
- ছেঁড়া-ফাটা বা ত্রুটিযুক্ত (Mutilated or Defective Notes)।
- দাবিযোগ্য (Claimable Notes) – ৯০ শতাংশের কম অংশ থাকা নোট।
- আগুনে পোড়া নোট (Burnt Notes)।
আরও পড়ুন:
আগুনে পোড়া ও জাল নোটের ক্ষেত্রে নিয়ম (Burnt and Counterfeit Notes)
আগুনে পোড়া নোটের ক্ষেত্রে সাধারণ ব্যাংক কোনো সমাধান দিতে পারবে না। গ্রাহককে সরাসরি বাংলাদেশ ব্যাংকের শাখা অফিসে (Bangladesh Bank Branch Office) আবেদন করতে হবে। এছাড়া, কেউ যদি ইচ্ছাকৃতভাবে জাল নোট (Fake/Counterfeit Note) বা ভিন্ন ভিন্ন নোটের অংশ জোড়া দিয়ে টাকা বদলানোর চেষ্টা করেন, তবে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা (Legal Action) নেওয়া হবে।
ব্যাংক সেবা দিতে অস্বীকার করলে করণীয় (What to do if Banks Refuse Service)
বাংলাদেশ ব্যাংক স্পষ্টভাবে জানিয়েছে, প্রতিটি ব্যাংকের প্রতিটি শাখা (Every branch of every bank) এই সেবা দিতে বাধ্য। যদি কোনো শাখা ছেঁড়া বা ত্রুটিপূর্ণ নোট নিতে অস্বীকার করে, তবে গ্রাহক সরাসরি ওই ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে অথবা বাংলাদেশ ব্যাংকের হটলাইন ১৬২৩৬ (16236)-এ কল করে অভিযোগ করতে পারবেন। সার্কুলারে হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে যে, এই নীতিমালা অমান্যকারী ব্যাংকের বিরুদ্ধে কড়া প্রশাসনিক ব্যবস্থা (Administrative Action) নেওয়া হবে।
আরও পড়ুন:
গ্রাহকদের জন্য বিশেষ সতর্কতা (Special Precautions for Customers)
নোট বিনিময়ের সময় গ্রাহকদের কিছু বিষয় খেয়াল রাখতে হবে:
- সঠিকভাবে উপস্থাপন: নোটের অংশগুলো যেন পরিষ্কার বোঝা যায়। আঠা দিয়ে জোড়া দেওয়ার সময় খেয়াল রাখতে হবে যেন নম্বর ঢাকা না পড়ে।
- ভুল তথ্য পরিহার: ইচ্ছাকৃতভাবে ভিন্ন নোটের অংশ জোড়া দেওয়া জালিয়াতির শামিল।
- হয়রানি এড়াতে: তাৎক্ষণিক বিনিময়যোগ্য নয় এমন নোটের ক্ষেত্রে ব্যাংক থেকে অবশ্যই আবেদনপত্রের রিসিভ কপি (Acknowledgment Receipt) সংগ্রহ করতে হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এই নতুন নীতিমালা সাধারণ মানুষের দীর্ঘদিনের ভোগান্তি লাঘব করবে। এখন থেকে ছেঁড়া টাকার সঠিক মূল্য পেতে আর দালালের খপ্পরে পড়তে হবে না। হাতের কাছের যেকোনো ব্যাংক শাখা থেকেই গ্রাহকরা তাদের নায্য পাওনা বুঝে নিতে পারবেন। তবে গ্রাহকদেরও সচেতন থাকতে হবে যেন তারা কোনোভাবেই জাল বা বিকৃত নোটের মাধ্যমে প্রতারণার আশ্রয় না নেন।





