আকাশ ছোঁয়ার প্রত্যয় নিয়ে বরেন্দ্রের মাটি থেকে বিশ্ব আসরে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব তুলে ধরার গল্প ছিল সাধনা আর সাহসের এক বিস্ময়কর যাত্রা। বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচ তরুণ গড়েছেন ইতিহাস, জিতে নিয়েছেন ‘নাসা স্পেস অ্যাপস চ্যালেঞ্জ ২০২৩’ এর বিশ্ব চ্যাম্পিয়নের মুকুট।
প্রথমে দেশজুড়ে কয়েক হাজার এরপর পৃথিবীর ১৫২টির বেশি দেশের প্রায় ৫৮ হাজার প্রতিযোগীর ভিড়ে জায়গা করে নেন বরেন্দ্রর এই শিক্ষার্থীরা।
টিম ভয়েজার্সের লেভেল ডিজাইনার মো. আতিক বলেন, ‘যারা ভার্চুয়ালি পার্টিসিপেট করে এবং যারা অন সাইট করে, একসঙ্গেই জাজমেন্টটা হয়। আমরা নিজেরাও ভার্চুয়ালি পার্টিসিপেট করেছিলাম, পরবর্তীতে আমরা রিজিওনাল চ্যাম্পিয়ন এবং ন্যাশনাল চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পরে আমরা গ্লোবাল নমিনেশন পাই। এই ধারাবাহিকতায় আমরা গ্লোবাল ফাইনালিস্ট এবং এরপর আমরা চ্যাম্পিয়ন হই।’
আরও পড়ুন:
প্রতিযোগিতাটি হয়েছিল ‘এভরিথিং স্টার্টস উইথ ওয়াটার’ বিষয়ভিত্তিক, যেখানে ‘অ্যাকুয়া এক্সপ্লোরার’ নামের একটি প্রজেক্ট উপস্থাপন করে টিম ভয়েজার্স।
জলবায়ুর পরিবর্তনের কারণে জীবন রক্ষাকারী পানির ওপর ঠিক কী প্রভাব পড়ছে তা স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীদের কাছে গেম ও স্টোরিটেলিংয়ের মাধ্যমে বোঝাতেই তাদের এ প্রজেক্ট।
টিম ভয়েজার্সের দলনেতা মো. খালিদ সাকিব বলেন, ‘নাসা স্পেস অ্যাপ চ্যালেঞ্জ হচ্ছে একটা গ্লোবাল হ্যাকাথন। এখানে কম্পিটিশনে পার্টিসিপেট করার সময়-ই কিন্তু আমাদের একটা চ্যালেঞ্জ সিলেক্ট করতে হয়। আমরা যে চ্যালেঞ্জটা নিয়ে কাজ করছিলাম সেটার টাইটেলটা হলো ‘এভরিথিং স্টার্টস উইথ ওয়াটার’। এটা যদি একটু সংক্ষেপে বলি, পৃথিবীতে প্রায় ৩৭০ কুইন্টিলিয়ন গ্যালন পানি আছে। কিন্তু এর মধ্যে মাত্র ০ দশমিক ০১ শতাংশ-ই বিশুদ্ধ পানি। সেক্ষেত্রে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে আমাদের গ্লোবাল ওয়াটার সাইকেলটাতে কী ধরনের পরিবর্তন আসছে, এ জিনিসগুলো আমরা কত সহজভাবে, স্টোরিটেলিংয়ের মাধ্যমে স্কুলের বাচ্চাদের কাছে তুলে ধরতে পারি, সেটাই ছিল আমাদের মূল চ্যালেঞ্জ।’
তবে এই যাত্রা পথ এতটা সহজ ছিল না। বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগিতায় বরেন্দ্র থেকে নাসা যাওয়া সহজ হয়েছে। প্রতিযোগীরা জানান, তাদের জার্নিটা কঠিন ছিল। সেরা ৫০ দল অন সাইটে যেতে পারে।
আরেকজন জানান, বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তারা পূর্ণ সমর্থন পেয়েছেন।
টিম ভয়েজার্স তরুণ শিক্ষার্থীদের অনুপ্রেরণা যোগাচ্ছে। তাদের দেখে বর্তমানে অনেক তরুণ স্বপ্ন বুনছে নতুন কিছু করার।
আরও পড়ুন:
কম্পিউটার সাইন্স এন্ড ইন্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্টের প্রধান শামীম আহমেদ বলেন, ‘এ সাফল্যে আমি দু’টি পার্টে দেখি। প্রথমত, এ ছেলে-মেয়েদের যে কিছু টেকনিক্যাল স্কিল আছে, তাদের যে কিছু করার সক্ষমতা আছে, এটা একটা প্রমাণ। তাদের মধ্যে যে আত্মবিশ্বাসটা জন্ম নিচ্ছে যে, “আই ক্যান ডু সামথিং”— এটা হচ্ছে সবচেয়ে বড় অ্যাচিভমেন্ট আমার কাছে মনে হয়।’
তিনি বলেন, ‘দ্বিতীয় যে বিষয়টি তাদের অর্জন হয়েছে সেটা হচ্ছে— একটা বড় প্লাটফর্মে গিয়ে অন্যদেরকে দেখতে পেয়েছে যে, মানুষের স্বপ্ন আসলে কত দূর যায়, কীভাবে পূরণ করে! আমরা এ অগ্রগতিটা ধরে রাখতে চাই।’
বিজয়ী শিক্ষার্থীদের নিয়ে গর্ব করে সামনে আরও ভালো কিছু করার প্রত্যাশা করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য।
বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য খাদেমুল ইসলাম মোল্যা বলেন, ‘আমাদের পরবর্তী গোল হলো, বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, এরপরে বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ বিশ্ববিদ্যালয়, তারপরে আমরা ইন্টারন্যাশনালি যাবো। এই লক্ষে আমরা কাজ করছি। শুধু সার্টিফিকেট দিয়ে আসলে চাকরির সুযোগ নেই। এজন্য আমরা এটার পাশাপাশি তাদের দক্ষতা অনুযায়ী তাদের এক্সপার্টাইজের দিকে বেশি খেয়াল করছি।’