মার্কিন রাজনীতিতে মামদানির উত্থানে দুশ্চিন্তায় মোদি সমর্থকরা

মেয়রপ্রার্থী জোহরান মামদানি
মেয়রপ্রার্থী জোহরান মামদানি | ছবি: সংগৃহীত
1

নিউইয়র্কে মেয়রপ্রার্থী জোহরান মামদানি। মার্কিন রাজনীতিতে তার উত্থানে তোলপাড় যুক্তরাষ্ট্র থেকে সুদূর ভারত। বা বলা যায়, মুসলিম মামদানি দুশ্চিন্তার ভাঁজ ফেলেছেন মোদি সমর্থকদের কপালে। বিশ্লেষকরা বলছেন, ঠোঁটকাটা এই ডেমোক্র্যাট নেতার স্পষ্টবাদিতায় ক্ষুব্ধ গোঁড়া হিন্দুরা।

নভেম্বরের নির্বাচনে জিতলে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে জনবহুল শহর নিউইয়র্কের প্রথম দক্ষিণ এশীয় ও ভারতীয় বংশোদ্ভূত মেয়র হবেন জোহরান মামদানি। কিন্তু যে পরিচয়ে তিনি বিশ্বনেতৃত্বে থাকা দেশটির রাজনীতিতে পথিকৃৎ, সেই একই পরিচয়ে তিনি রোষের কারণ খোদ ভারতীয়দের কাছেই।

গেলো ২৪ জুন ডেমোক্রেটিক পার্টির মেয়োরাল প্রাইমারিতে জয়ী হয়ে চমকে দেন মামদানি। প্রচারণার সময় তীব্র বিদ্বেষ পাশ কাটিয়ে জয় নিশ্চিত করেন তিনি। আর বিরোধী রিপাবলিকান শিবিরের পর এই বিদ্বেষের বড় অংশের নেপথ্যে কট্টর হিন্দুরা। বিশ্লেষকরা বলছেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সমর্থক এবং তার সরকারের নেতৃত্বে, বিশেষ করে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরোধী যারা- তাদের দ্বন্দ্বে উত্তেজনার পারদ ছড়িয়েছে মামদানির নির্বাচনী প্রচারে।

মামদানির বিরুদ্ধে আক্রমণাত্মক প্রচারণার বড় অংশজুড়েই তার ধর্ম-পরিচয়। প্রখ্যাত ভারতীয় বংশোদ্ভূত চলচ্চিত্র পরিচালক মিরা নায়ার এবং প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ ও লেখক, উগান্ডান বংশোদ্ভূত মাহমুদ মামদানির ছেলে। ৩৩ বছর বয়সী জোহরান মামদানি পিতার মতোই নিজ ধর্মবিশ্বাসে মুসলিম। শুধু এ কারণেই মামদানিবিরোধীদের অনেকেই মেয়রপ্রার্থীকে আখ্যায়িত করছেন জিহাদি, ইসলামপন্থি, হিন্দুবিরোধী কিংবা ভারতবিরোধী বলে।

আরো পড়ুন:

আরব আমেরিকান অ্যাসোসিয়েশন অব নিউইয়র্কের রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও সাবেক নির্বাহী পরিচালক লিন্ডা সার্সৌর বলেন, ‘ডেমোক্রেটিক প্রাইমারির সময় শুধু রিপাবলিকান শিবির থেকে বিদ্বেষপূর্ণ আক্রমণের শিকার হননি মামদানি; ডেমোক্র্যাট শিবিরও সমানে বিদ্বেষ ছড়িয়েছে। অ্যান্ড্রু কুওমো আর তার অন্যান্য মিত্ররা মুসলিমবিদ্বেষী বিজ্ঞাপন প্রচার করেছে। বলতে ঘৃণা হচ্ছে কিন্তু তারা মামদানির বাহ্যিক রূপ বদলে ছবিতে তাকে কট্টর মুসলিম হিসেবে চিত্রায়িত করেছে।’

নিউইয়র্কে ভোটারদের সমর্থন আদায়ের মধ্যে এসব বিশেষণ মামদানির প্রচারে প্রভাব ফেলতে পারে বলে শঙ্কা রয়েছে। অন্তর্বর্তী মেয়র এরিক অ্যাডামস, সাবেক গভর্নর অ্যান্ড্রু কুওমোর মতো অভিজ্ঞ রাজনীতিকদের টেক্কা দিতে ভোটের মাঠে নামা মামদানি গাজা ও ভারতে মানবাধিকার লঙ্ঘন ইস্যুতে সোচ্চার। অযোধ্যায় হিন্দু উগ্রবাদীদের গুঁড়িয়ে দেয়া বাবরি মসজিদের স্থানে মন্দির নির্মাণের বিরোধিতায় ২০২০ সালে টাইমস স্কয়ারে বিক্ষোভে অংশ নিয়েছিলেন তিনি।

মেয়র হিসেবে মামদানিকে দেখতে নারাজ 'ইন্ডিয়ান আমেরিকান্স ফর কুওমো' নামের একটি সংগঠন তিন হাজার ৫০০ ডলারের বেশি অর্থ খরচ করে বিমান ভাড়া করে শুধু একটি ব্যানার ওড়াতে, যেখানে লেখা ছিল 'বৈশ্বিক ইন্তিফাদা থেকে নিউইয়র্ককে বাঁচাতে মামদানিকে প্রত্যাখ্যান করুন'।

মোদি নিউইয়র্কে গেলে তার সাথে দেখা করবেন কি না- এমন প্রশ্নের উত্তরে সম্প্রতি মামদানি ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীকে আখ্যায়িত করেন যুদ্ধাপরাধী হিসেবে। কারণ হিসেবে তুলে ধরেন ২০০২ সালে মোদি ভারতের মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা, হাজারও মানুষের মৃত্যু-যাদের বড় অংশই মুসলিম এবং সহিংসতার সময় মোদির নীরবতার কথা। ওই ঘটনার পর ধর্মবিশ্বাসের স্বাধীনতায় গুরুতর আঘাত হানার অভিযোগে মোদির ভিসা বাতিল করেছিল যুক্তরাষ্ট্র।

বিশ্লেষকরা বলছেন, ঠোঁটকাটা ডেমোক্র্যাট নেতা মামদানির স্পষ্টবাদিতায় ক্ষুব্ধ গোঁড়া হিন্দুরা। তার বিরুদ্ধে যারা সরব, তাদের মধ্যে একটি বড় অংশ ভারতে ক্ষমতাসীন মোদি সরকার ও তার দল বিজেপির সদস্য।

লিন্ডা সার্সৌর বলেন, ‘এই মুহূর্তে আমরা কট্টর ডানপন্থিদের তোপের মধ্যে রয়েছি। অনেকেই মামদানিকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বের করে দেয়ার কথা বলছেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্রে জন্মাননি বলে তার নাগরিকত্ব বাতিলের আহ্বান জানাচ্ছেন অনেকে। মুসলিবিদ্বেষী কথাবার্তার বিস্ফোরণ ঘটছে। নির্বাচনের দিন পর্যন্ত সম্ভবত এই পরিবেশ স্থায়ী হবে।’

মেয়র নির্বাচনে একধাপ এগোনোর পরই ভারতে বিজেপিপন্থী সংবাদমাধ্যম আজতাকের এক অনুষ্ঠানে দাবি করা হয়, ভারতবিরোধী প্রচারের জন্য বিভিন্ন সংস্থার কাছ থেকে তহবিল পেয়েছেন মামদানি। নিউইয়র্কে মুসলিম জনসংখ্যা বাড়ছে বলেও সতর্ক করে চ্যানেলটি। যদিও পিউ রিসার্চ সেন্টারের হিসাব বলছে, নিউইয়র্কে সাত লাখের বেশি ভারতীয় প্রবাসী ও ভারতীয় বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিকের বাস, যা যুক্তরাষ্ট্রের অন্য যেকোনো শহরের চেয়ে বেশি।

জুনের মেয়োরাল প্রাইমারির প্রাথমিক ফল বলছে, লিটল বাংলাদেশ অ্যাভিনিউ, জ্যাকসন হাইটস আর পার্কচেস্টারের মতো এশীয় জনগোষ্ঠী অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে সবচেয়ে বেশি সমর্থন কুড়িয়েছেন মামদানি। ১ জুলাইয়ের সবশেষ জরিপ বলছে, ৫৬ শতাংশ সমর্থনে এগিয়ে আছেন তিনি, যেখানে নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী কুওমোর প্রতি সমর্থন ৪৪ শতাংশ।

সেজু