গাজায় থেরাপিউটিকের সংকটে শিশু মৃত্যুঝুঁকি বাড়ছে: ইউনিসেফ

গাজায় ত্রাণ নিচ্ছে শিশুরা
গাজায় ত্রাণ নিচ্ছে শিশুরা | ছবি: সংগৃহীত
0

অপুষ্টিতে ভুগে প্রতিদিনই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছে গাজা উপত্যকার শিশুরা। এর মধ্যেই ইসরাইলি অবরোধে বিশেষ খাবার থেরাপিউটিকের তীব্র সংকটে শিশু মৃত্যুঝুঁকি বাড়ছে বলে সতর্ক করেছে ইউনিসেফ। এছাড়াও খাদ্যের অভাবে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে কিডনি রোগীসহ অসংখ্য ফিলিস্তিনি। শিগগিরই খাদ্য সহায়তা ঢুকতে দেয়া না হলে রোগীদের মৃত্যুর ঝুঁকি ঠেকানোর উপায় খুঁজে পাওয়া যাবে না বলে সতর্ক করেছেন চিকিৎসকরা।

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার ৫০ বছর বয়সী কিডনি রোগী ইউসুফ। ২০২১ সালের মে মাসে কিডনি বিকল হওয়ার পর থেকে ডায়ালাইসিসের ওপর বেঁচে আছেন। কিন্তু ইসরাইলি আগ্রাসন ও অবরোধে তীব্র খাবার সংকট দেখা দেয়ায় জীবনযুদ্ধে এক কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি তিনি।

একই হাল গাজা ভূখণ্ডের আরও অসংখ্য কিডনি রোগীর। ক্ষুধার সঙ্গে লড়াই করে ৩ থেকে ৪ চার ঘণ্টা বসে ডায়ালাইসিস করায় দিন দিন জীবন আরও সংকটাপন্ন হয়ে উঠেছে।

বাসিন্দাদের একজন বলেন, ‘খালি পেটে ডায়ালাইসিস করা খুব কষ্টের। আমাকে দিনে একটি শসা বা একটি আপেল খেতে বলা হয়েছে, কিন্তু শেষ কবে আপেল খেয়েছি মনে নেই। এমন অবস্থা যে, আপেলের রঙও ভুলে গেছি। মাংসের স্বাদ কেমন তাও বলতে পারবো না।’

প্রয়োজনীয় খাবারের অভাবে কিডনি রোগীদের স্বাস্থ্যের অবনতি হতে শুরু করেছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। এমন পরিস্থিতির মধ্যেও যদি গাজা ভূখণ্ডে শিগগগিরই খাদ্য সহায়তা না ঢুকে, তাহলে রোগীদের মৃত্যুর ঝুঁকি ঢেকানোর কোনো উপায় থাকবে না বলেও সতর্ক করা হয়েছে।

আল-আকসা হাসপাতালের কিডনি ডায়ালাইসিস বিভাগের পরিচালক ডা. সাঈদ খাত্তাব বলেন, ‘কিডনি রোগীদের তাজা মাংস, শাকসবজি এবং ফলের মতো বিশেষ পুষ্টির প্রয়োজন। কিন্তু বর্তমানে তারা এসব থেকে বঞ্চিত। যার কারণে ডায়ালাইসিস সেশন ঠিকমতো শেষ করা যাচ্ছে না। ফলে তাদের শরীরে পটাসিয়াম, ইউরিয়া, কেরাটিন ঘনীভূত হচ্ছে। যা তাদের জীবনের জন্য ঝুঁকির কারণ হয়ে উঠেছে।’

অনাহারে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে গাজার শিশুরাও। ইউনিসেফের তথ্য বলছে, চলতি বছরের এপ্রিল থেকে জুলাইয়ের মাঝামাঝি পর্যন্ত, তীব্র অপুষ্টিতে ভোগা শিশুর সংখ্যা ২০ হাজার ৫০০ ছাড়িয়েছে। শিশুদের পুষ্টির অভাব পূরণে কোনো উপায় না পেয়ে দুশ্চিন্তায় বাবা-মায়েরা।

বাসিন্দাদের একজন বলেন, 'চার বছর বয়সী শিশু আমিরের ওজন দশ কেজি হওয়া উচিত, কিন্তু বর্তমানে তার ওজন ৭ কেজি ৪০০ গ্রাম। যা অপুষ্টির সর্বোচ্চ স্তর। যুদ্ধের আগে আমার আরেক শিশু ইউসুফে ওজন ছিল ১৩ কেজি। এখন অপুষ্টিতে তার ওজন ৯ কেজিতে নেমে এসেছে। অপুষ্টিতে ভুগে কঙ্কাল হয়ে গেছে। আমার মতো অনেকের শিশু মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছে।'

ইসরাইলের তৈরি দুর্ভিক্ষের ঢেউয়ে মারা যাওয়া ফিলিস্থিনিদের সংখ্যা বেড়ে একশ ছাড়িয়েছে। খাবারের অভাবে প্রতিদিনই প্রাণ ঝড়ছে শিশু থেকে বৃদ্ধ সবার। পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ করে তুলেছে, পুষ্টির অভাব পূরণে ব্যবহৃত খাদ্য থেরাপিউটিকের সংকট। এটি ফুরিয়ে আসায় তীব্র অপুষ্টিতে ভোগা শিশুদের জীবন বাঁচানো কঠিন হয়ে পড়ছে বলে জানিয়েছে ইউনিসেফ।

জর্ডান ইউনিসেফের মুখপাত্র সালিম ওওয়েস বলেন, ‘অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি ছাড়া গাজা উপত্যকার শিশু এবং পরিবারগুলোর দুর্দশা সমাধান সম্ভব না। কিন্তু তার কোনো লক্ষণ নেই। এ অবস্থায় গাজায় সব ধরনের সহায়তা প্রবেশে দ্রুত অনুমতি দেয়া সত্যিই অপরিহার্য হয়ে উঠেছে। যুদ্ধ চলমান থাকলেও খাবার পাওয়া সাধারণ গাজাবাসী ও শিশুদের অধিকার।’

বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির তথ্য বলছে, খাবারের অভাবে সব মিলিয়ে গাজা উপত্যকায় অপুষ্টির শিকার ৯০ হাজার নারী ও শিশু। এছাড়া গড়ে প্রতিদিন ২০০ শিশু চিকিৎসায় ভর্তি হচ্ছে বলে দাবি ইউনিসেফের। মূলত হত্যাযজ্ঞ ছাড়াও ইসরাইলের এমন নিপীড়নের কৌশলে ২০ লাখের বেশি গাজাবাসী সবাই অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছেন। খাবারের অভাবে ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে এগুচ্ছে সব বয়সী মানুষই।

সেজু