সম্পূর্ণ গাজা উপত্যকা দখলে ইসরাইলের পরিকল্পনা নিয়ে কয়েকদিন ধরে সরব ছিল বিশ্ব রাজনীতি। আপাতত উপত্যকার উত্তরের শহর গাজা সিটি দখলের অনুমোদন দিয়েছে ইসরাইলের নিরাপত্তা মন্ত্রিসভা। বিষয়টি নিশ্চিত করেছে ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়।
নেতানিয়াহু সরকারের দুই কর্মকর্তার বরাতে রয়টার্স জানায়, বর্তমানে অনুমোদিত প্রস্তাবটি পাঠানো হবে পূর্ণ মন্ত্রিসভায়, যা পাস হতে পারে আগামী রোববার (১০ আগস্ট)।
প্রস্তাবে উল্লেখ করা হয়, আগামী ৭ অক্টোবরের আগে গাজা সিটির সব বাসিন্দাদের জোরপূর্বক উচ্ছেদ করা হবে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের বিবৃতি অনুসারে যুদ্ধরত অঞ্চলের বাইরে মানবিক সহায়তা প্রদান করবে ইসরাইল। পাশাপাশি সম্পূর্ণ গাজা উপত্যকা দখলসহ ৫টি নীতি গ্রহণ করে নিরাপত্তা মন্ত্রিসভা।
মন্ত্রিসভার বৈঠকের কিছুক্ষণ আগে নেতানিয়াহু জানান, গাজা উপত্যকার সম্পূর্ণ দখল নেয়ার বিষয়ে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ তিনি। যদিও গোটা উপত্যকার শাসনভার নিতে চায় না ইসরাইল, বরং গাজার শাসনভার তুলে দেয়া হবে আরবদের হাতে। তবে নেতানিয়াহুর পদক্ষেপের নিন্দা জানিয়েছে গাজাবাসী।
আরও পড়ুন:
গাজাবাসীদের মধ্যে একজন বলেন, ‘উপত্যকায় দখলের আর কিছুই বাকি নেই। তিনি দখল করলেন কি না, এতে কোনো পার্থক্য গড়বে না।’
আরেকজন বলেন, ‘জল, স্থল আর আকাশ, তিন দিক থেকেই আমাদের দখল করা হয়েছে। তবে আমাদের জীবন চালিয়ে নিতে হবে।’
ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু বলেন, ‘আমরা উপত্যকা ধরে রাখতে চাই না, আমরা শুধু নিরাপত্তা পরিধি চাই। শাসনকাজ চালানোর কোনো পরিকল্পনা নেই আমাদের। গাজাবাসীর সুন্দর জীবন দেয়ার পাশাপাশি ইসরাইলিদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে আমরা আরব বাহিনীকে উপত্যকার শাসনভার তুলে দিতে চাই।’
এদিকে বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) উপত্যকায় দিনভর হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন অর্ধশতাধিক ফিলিস্তিনি। আরব ও পশ্চিমাদের বিমানের মাধ্যমে ত্রাণ ফেলার সময় চাপা পড়ে প্রাণ হারানোর তথ্যও মিলেছে। অপুষ্টি ও অনাহারে মৃত্যুর সংখ্যা দুইশো’র ঘর ছুঁইছুঁই।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, অনূর্ধ্ব ৫ বছরের প্রায় ১২ হাজার ফিলিস্তিনি শিশু তীব্র অপুষ্টিতে ভুগছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক তেদ্রোস আধানম ঘেব্রিয়েসুস বলেন, ‘চারপাশে অপুষ্টি আর ক্ষুধাজনিত মৃত্যু বাড়ছে। ৫ বছরের নিচে প্রায় ১২ হাজার শিশুর তীব্র অপুষ্টি শনাক্ত করা হয়েছে, যা একমাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। এ বছরই ৯৯ জন অপুষ্টিতে মারা গেছে, যাদের মধ্যে ২৯ জনের বয়স ৫ বছরের কম ছিল।’
দিন যতই গড়াচ্ছে, নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে তীব্র হচ্ছে গণরোষ। বৃহস্পতিবার নৌকা নিয়ে গাজার উপকূলে যান হামাসের হাতে জিম্মি স্বজনেরা। এসময় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি ও জিম্মিদের মুক্তির দাবি জানান তারা। পাশাপাশি গাজায় আগ্রাসন বন্ধে আহ্বান জানানো হয় ইসরাইলি সরকারের প্রতি।
এ দিন সারাদিনই বিক্ষোভে উত্তাল ছিল তেল আবিবের বিভিন্ন সড়ক। বিভিন্ন ব্যানার, প্ল্যাকার্ড ও পোস্টারে নেতানিয়াহু সরকারের আগ্রাসী নীতির সমালোচনা করেন ইসরাইলিরা। রাতে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায় পুলিশ। এসময় বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে ব্যবহার করা হয় জলকামান। আটক করা হয় বেশ কয়েকজনকে।