ট্রাম্পের অভিবাসন স্থগিত: আফগান শরণার্থী ও আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের উদ্বেগ বাড়ছে

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প | ছবি: রয়টার্স
0

ট্রাম্পের অভিবাসন প্রক্রিয়া স্থগিতের ঘোষণায় নিরাপত্তা শঙ্কায় ভুগছে আফগান শরণার্থীরা। শুধু তাই নয় যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমানোর স্বপ্নও ধুলোয় মিশে গেছে। এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রে পড়াশোনা করার আশার আলো নিভে যাওয়ার পথে ভারতীয় শিক্ষার্থীদের। এরইমধ্যে ভারতীয়দের জন্য মার্কিন ভিসা ইস্যু করার সংখ্যাও ঠেকেছে তলানিতে। এছাড়া, বিভিন্ন উন্নয়নশীল দেশের ওপর ট্রাম্পের ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞায় হতাশ আফ্রিকান অঞ্চলের বাসিন্দারা।

গেল ২৬ নভেম্বর ওয়াশিংটন ডিসিতে ন্যাশনাল গার্ডের দুই সদস্যের ওপর অতর্কিত হামলা চালায় আফগান নাগরিক রহমানউল্লাহ লাকনাওয়াল। যাদের মধ্যে সারা বেকস্ট্রম নামে এক সদস্য মারা গেছেন এবং গুলিবিদ্ধ আরেক সদস্য এখনও শঙ্কামুক্ত নন। এ ঘটনায় হামলাকারীর বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। এটিকে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড উল্লেখ করে একদিনের মধ্যেই অভিবাসন নীতিতে কঠোর বিধি নিষেধ আরোপ করেন ট্রাম্প।

এরই মধ্যে অবৈধ অভিবাসীদের জন্য বন্ধ হচ্ছে যাবতীয় ফেডারেল সুবিধা। আফগানিস্তান, ইরান, মিয়ানমারসহ ১৯টি দেশের গ্রিন কার্ডধারী নাগরিকদের অভিবাসন প্রক্রিয়া পুনরায় যাচাই-বাছাইয়ের নির্দেশ দিয়েছেন ট্রাম্প। এমনকি তৃতীয় বিশ্বের সব দেশ থেকে অভিবাসন প্রক্রিয়া স্থগিতের আহ্বানও জানান মার্কিন প্রেসিডেন্ট।

আটক সন্দেহভাজন হামলাকারী স্ত্রী ও পাঁচ সন্তান নিয়ে ওয়াশিংটনে বাস করতেন। এখন তাদের যুক্তরাষ্ট্র থেকে বের করে দেয়ার পরিকল্পনা করছে ট্রাম্প প্রশাসন। এমনকি বাইডেনের শাসনামলে তালেবানের শাসন থেকে পালিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয় নেয়া আফগান নাগরিকদের বিষয়েও কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছেন ট্রাম্প।

ওয়াশিংটনে গুলির ঘটনায় আফগানদের অভিবাসন প্রক্রিয়া অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করায় বিপাকে পড়েছেন কয়েক হাজার আফগান শরণার্থী। যুক্তরাষ্ট্রের প্রবেশের স্বপ্নও এখন ধুলোয় মিশে গেছে তাদের। ভুক্তভোগীরা বলছেন, তাদের শেষ নিরাপদ আশ্রয়স্থল ছিল যুক্তরাষ্ট্র। আফগানিস্তানে ফিরে গেলে তালেবানের হাত থেকে রেহাই পাবে না তারা।

আফগান শরণার্থীদের মধ্যে একজন বলেন, ‘পাকিস্তান থেকে অনেকে আফগানিস্তানে গিয়ে নিখোঁজ হয়েছেন। কেউ জানে না তারা কোথায়। এখন মার্কিন সরকারও মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে।’

শরণার্থীর মর্যাদা না পাওয়ায় পাকিস্তানে আশ্রয় নেয়া আফগানদের জীবন আরও অনিশ্চয়তার দিকে যাচ্ছে। গেলো বছর ৫ লাখের বেশি আফগানকে ফেরত পাঠিয়েছে পাকিস্তান সরকার। আফগান শরণার্থীরা জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কায় আছেন।

আরও পড়ুন:

এ আফগান শরণার্থী বলেন, ‘আফগানিস্তানে আমাদের কোনো ভবিষ্যৎ নেই। এখন আমাকে নির্বাসিত করা হলে কোথায় যাবো, কী করবো কিছুই জানি না।’

শুধু আফগানিস্তান নয়, তৃতীয় বিশ্বসহ এশিয়ার অনেক দেশের নাগরিকও একই আতঙ্কে ভুগছে। ভিসা-নীতি কঠোর করায় বিপাকে পড়েছেন ভারতীয়রা। উচ্চ শিক্ষার জন্য আবেদন করে এখন ভিসা না পাওয়ার শঙ্কায় বহু শিক্ষার্থী।

দিল্লিতে অবস্থিত ভিসা সুবিধা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, গেল কয়েকদিনে মার্কিন ভিসা ইস্যু করার হার কমে গেছে অনেকাংশে। এছাড়া ভিসা দেয়ার আগে ব্যাপক যাচাই-বাছাই ও জবাবদিহির মুখে পড়তে হচ্ছে ভিসা-প্রার্থীদের।

দিল্লিতে অবস্থিত ভিসা সুবিধা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘ভারতের মেধাবীরা উন্নত সুযোগ, নিরাপত্তা ও ভালো জীবনের আশায় যুক্তরাষ্ট্রে যেতে চায়। এই ধরনের সিদ্ধান্ত থেকে মার্কিন প্রশাসনের সরে আসা উচিত।’

এছাড়া আফ্রিকান অঞ্চলসহ বেশ কয়েকটি উন্নয়নশীল দেশের নাগরিকদের ওপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারি করে ট্রাম্প প্রশাসন। এতে উদ্বেগ ও হতাশা প্রকাশ করেছেন দক্ষিণ আফ্রিকার বাসিন্দারা।

যুক্তরাষ্ট্রে দক্ষিণ আফ্রিকার বাসিন্দাদের মধ্যে একজন বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের এমন সিদ্ধান্ত হতাশাজনক। যুক্তরাষ্ট্রসহ সারা বিশ্বে আমরা নির্বিঘ্নে ভ্রমণ করতে চাই।’

যদিও যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন প্রক্রিয়া স্থায়ীভাবে স্থগিতের বিষয়ে ট্রাম্প নির্দিষ্ট করে কোনো দেশের নাম উল্লেখ করেননি।

এসএইচ