জাপান-চীন ও ভারতের বৈরী আবহাওয়ায় ভয়াবহ বন্যা, বহু মানুষের জীবন বিপন্ন

চীনে বন্যা
চীনে বন্যা | ছবি: সংগৃহীত
0

নজিরবিহীন বৃষ্টিতে প্লাবিত জাপানের দক্ষিণাঞ্চল। কিরিশিমা শহরে একদিনেই রেকর্ড করা হয়েছে ৫০০ মিলিমিটার বৃষ্টি। অন্যদিকে চীনের হেনান প্রদেশেও একদিনে ২০০ মিলিমিটার বৃষ্টির পর বন্যা সতর্কতা লেভেল থ্রিতে উন্নীত করেছে স্থানীয় সরকার। এদিকে ভারতের উত্তরাখণ্ডে আকস্মিক বন্যায় প্রাণহানি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ছয়জনে। বৈরী আবহাওয়ায় দুই দিন আটকে থাকার পর রাজ্যটির গাঙ্গোত্রী অঞ্চল থেকে ৪০০ তীর্থযাত্রীকে উদ্ধার করেছে ভারতের সেনাবাহিনী।

উত্তরাখণ্ডের পাহাড়ি রাস্তার ওপর দাঁড়িয়ে একটু পরপরই চোখ মুছছেন কালি দেবী। গেল মঙ্গলবারের আকস্মিক বন্যায় ছয় সন্তানকে হারিয়েছেন এ নির্মাণ শ্রমিক। তিন দিন পেরিয়ে গেলেও সান্ত্বনা হিসেবে জুটেছে শুধুই আশ্বাস।

কালি দেবী বলেন, ‘একজন মা হিসেবে আমার মধ্য দিয়ে কী যাচ্ছে বোঝাতে পারবো না। হেলিকপ্টার দিয়ে এখানে এসেছি যাতে আমার সন্তানদের খুঁজে পাই। হয়তো তারা বেঁচে আছে। সবসময় এটিই চিন্তা করছি।’

স্যাটেলাইট ছবিতেই উঠে আসছে প্রকৃতির ধ্বংসযজ্ঞের চিত্র। সরকারের তথ্য বলছে, আকস্মিক এই বন্যায় নিখোঁজ অন্তত ৫০ জন। তবে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ধারালি গ্রামের বাসিন্দাদের দাবি, কমপক্ষে ২০০ মানুষের সন্ধান মিলেনি। বিজ্ঞানীরা বলছেন, আকস্মিকভাবে হওয়ায় মেঘের বিস্ফোরণ বা ক্লাউড বার্স্টের পূর্বাভাস দেয়া কঠিন। পাহাড়ি এলাকায় ভূমিধসের কারণে ক্ষয়ক্ষতি ভয়াবহ হয়। আর বনাঞ্চল উজাড়ের কারণে ক্লাউড বার্স্ট দেখা যাচ্ছে নিয়মিত।

সিটি ইউনিভার্সিটি অফ হংকংয়ের এমিরিটাস অধ্যাপক জনি চ্যান বলেন, ‘ভারি বৃষ্টির পূর্বাভাস দেয়া কঠিন। কারণ এর বেশিরভাগই আকস্মিকভাবে হয়ে থাকে। ভারি বৃষ্টি হবার কারণ সম্পর্কে আমাদের পর্যাপ্ত জ্ঞান নেই। তাই বেশিরভাগ আবহাওয়া কেন্দ্র স্বল্পমেয়াদী ভারি বৃষ্টির পূর্বাভাস দিলেও সেটিকে আমরা কাস্টিং হিসেবে আখ্যা দেই।’

বৈরী আবহাওয়ার কারণে উত্তরাখণ্ডের গাঙ্গোত্রী অঞ্চল থেকে ৪০০ তীর্থযাত্রীকে উদ্ধার করেছে ভারতের সেনাবাহিনী। দুই দিন আটকে থাকার পর উদ্ধার হওয়ায় অনেকেই মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন। এদিকে ভূমিধ্বসে পাহাড়ি রাজ্যটির বেশিরভাগ সড়কই ব্যবহার অনুপযোগী। তাই উত্তরকাশীর ধারালি গ্রামের বাসিন্দাদের ত্রাণ পৌঁছাতে বেগ পোহাচ্ছে স্থানীয় সরকার।

ভারতের প্রতিবেশি চীনেও ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে বন্যা। হেনান প্রদেশে বেশ কয়েকটি শহর এখনো কয়েক ফুট পানির নিচে। রাজধানী ঝেং ঝোওসহ বেশিরভাগ স্থানে একদিনে রেকর্ড করা হয়েছে ২০০ মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টি। বন্যা সতকর্তা লেভেল থ্রি' তে উন্নীত করেছে স্থানীয় সরকার। চলছে বাসিন্দাদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়ার কার্যক্রম।

ভারী বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত জাপানের দক্ষিণাঞ্চলের বাসিন্দাদের জনজীবন। ভেঙ্গে পড়েছে অসংখ্য রাস্তাঘাট। প্লাবিত বেশ কয়েকটি এলাকা। কিরিশিমা শহরে একদিনে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ছাড়িয়েছে ৫০০ মিলিমিটার। কাগোশিমা প্রিফেকচারে জারি করা হয়েছে বিশেষ সতর্কতা।

এসএস