রাজধানীর ব্যস্ততম রুট কারওয়ান বাজার থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত মেট্রোরেলের পিলারজুড়ে দৃশ্যমান এক অভূতপূর্ব শিল্প-প্রতিবাদ ‘ফিরে দেখা ফ্যাসিস্ট রেজিম’। ব্যতিক্রমী এই গ্রাফিতির মধ্য দিয়ে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে গত দেড় দশকের ফ্যাসিবাদী শাসনামলের দমন-পীড়নের নানা নির্মম অধ্যায়।
শহরের হৃদপিণ্ডে এমন শিল্পচর্চার মাধ্যমে নতুন প্রজন্মকে ইতিহাসের এক অন্ধকার সময়ের মুখোমুখি করানোই যেন মূল উদ্দেশ্য। চোখে পড়ছে গুম, খুন, আয়নাঘরে নির্যাতনের প্রতীকী চিত্র, যেগুলো স্পষ্টতই তুলে ধরছে রাষ্ট্রীয় নিপীড়নের নির্মম বাস্তবতা। প্রতিটি পিলার যেন একেকটি ইতিহাসের দলিল। ২০০৯ থেকে শুরু করে ২০২৪ পর্যন্ত ঘটে যাওয়া আলোচিত হত্যাকাণ্ড, নিখোঁজের ঘটনা, এবং আন্দোলনরত ছাত্র-জনতার বিরুদ্ধে পরিচালিত দমন নীতির বর্ণনা এই গ্রাফিতিতে রূপ নিয়েছে রঙ ও রেখায়।
শিল্পীরা এখানে কেবল রংই করেননি, চিত্রিত করেছেন মানুষের কান্না, বেদনা ও প্রতিরোধের গল্প। নানা রঙের সংমিশ্রণে দৃষ্টিনন্দন এ চিত্র শৈলীতে পিলখানা ট্র্যাজেডি, খালেদা জিয়ার কারাবরণ, সীমান্তের কাঁটাতারে ফেলানীর মরদেহ, শাপলা চত্বরে গণহত্যা, রাতের ভোট, তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল, সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ড, রানা প্লাজা ধস, বিরোধী নেতাদের নির্বিচারে গ্রেফতার, কোটা সংস্কার ও নিরাপদ সড়ক আন্দোলনে হামলা, পুলিশি দমন-পীড়ন, তনু ধর্ষণ, প্রশ্নপত্র ফাঁস, পুরান ঢাকায় বিশ্বজিৎকে কুপিয়ে হত্যা, ক্যাঙারু কোর্ট, নিমতলিতে অগ্নিকাণ্ড, করোনার ভুয়া টেস্ট এবং ২৪-এর গণঅভ্যুত্থানের চিত্রসহ বাদ যায় নি কিছুই।
জুলাইকে যেনো মানুষ ভুলে যেতে না পারে তাই স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের এই উদ্যোগকে বাস্তবায়ন করেছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ শিশু থেকে শুরু করে বৃদ্ধ নাগরিক কেউ যেন এ ফ্যাসিবাদকে ভুলে না যায়। ফ্যাসিবাদের চেহারা যেন তারা হাঁটতে চলতে মনে রাখে। সেকারণে এ গ্রাফিতিগুলো করা। শাহবাগ থেকে শুরু করে আগারগাও পর্যন্ত মূল যে সড়কগুলো সেখানে মেট্রো পিলারে আমরা গ্রাফিতিগুলো করছি।’
রাষ্ট্রের বুকে অন্যায়, অনিয়ম দুর্নীতি নির্যাতন সাধারণ মানুষের কাছে কেবল অতীত স্মরণের কোনো অধ্যায় হয়ে নয়, বরং থাকুক আগামীর দিকে এগিয়ে যাওয়ার এক অন্তরালের বার্তা হিসেবেই। তাইতো ৩৬জুলাই স্মরণে ইতিহাস আঁকা হয়েছে দেয়ালে দেয়ালে।