জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় যে ঐতিহাসিক ৯ দাবি ছিল, তার একটি কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রসংসদ নির্বাচন। কিন্তু অভ্যুত্থান পরবর্তী প্রায় এক বছরেও কোথাও ছাত্রসংসদ নির্বাচন হয়নি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অবশেষে ২৯ জুলাই নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার তারিখ নির্ধারণ করেছে। দিয়েছে সেপ্টেম্বরের ২য় সপ্তাহে নির্বাচনের আভাস।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরাও ভোট দেয়ার জন্য আছেন মুখিয়ে। ডাকসু নির্বাচন হওয়া ছাড়া কোনো বিকল্প দেখছেন তারা। চাইছেন নির্বাচিত ডাকসুর মধ্য দিয়ে ক্যাম্পাসে তাদের অধিকার ও গণতান্ত্রিক পরিবেশ প্রতিষ্ঠা হবে।
এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘ডাকসুর কোনো বিকল্প নাই। আমরা সকল সাধারণ শিক্ষার্থী চাই যেন ডাকসু টা হোক।’
জাতীয় গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ বলছে, আর কোনো টালবাহানা নয়, গণঅভ্যুত্থানের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে নির্বাচন অনিবার্য। বিশেষ কোনো দলের চাপে নির্বাচন না দিলে তা হবে স্বৈরাচারী আচরণ।
জাতীয় গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের সদস্য সচিব জাহিদ আহসান বলেন, এতটুকু আশা দেখতে যে তারা অন্ততপক্ষে সর্বশেষ বারের মত যে ওয়াদা ছাত্রদের কাছে দিয়েছেন এ ওয়াদা তারা ভঙ্গ করবেন না। এ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, উপাচার্য, এ প্রক্টর বা এখন যারা রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োজিত হয়েছেন প্রত্যেকে গণঅভ্যুত্থানের কমিটমেন্ট ছাত্রদের কাছে দিয়ে তারা এ প্রশাসনিক কার্যক্রমে হাত দিয়েছেন।’
শিক্ষার্থীদের চাওয়াকে গুরুত্ব দিয়ে দ্রুতই নির্বাচন চায় ইসলামী ছাত্রশিবির। সংগঠনটি মনে করে, ক্যাম্পাসে এখন সহাবস্থানের রাজনীতি আছে, তাই এটাই নির্বাচনের উপযুক্ত সময়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রশিবিরের সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী আশিক বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের চাওয়া যেহেতু এটা তাই ছাত্রশিবিরও খুব স্ট্রংলি এটা চায় এবং খুব দ্রুত যেন ডাকসু নির্বাচনটা হয়। আর ক্যাম্পাসের সামগ্রিক পরিবেশ ঠিকঠাক রাখার জন্য ডাকসু নির্বাচনটা জরুরি। কারণ এখন একটা সহাবস্থান রয়েছে। ছাত্র সংগঠনগুলো প্রকাশ্যে তাদের কাজ করতে পারছে। কাউকে বাধ্য হয়ে ক্যাম্পাস ত্যাগ করতে হচ্ছে না। কিংবা হলের মধ্যে কোনো গেস্টরুম কালচার নেই। এর থেকে বেস্ট পরিবেশ আর কী হতে পারে।’
ছাত্রদল বলছে, ডাকসুর জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করতে হবে। বিশেষ করে নিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলার উন্নতির দাবি সংগঠনটির।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের দপ্তর সম্পাদক মল্লিক ওয়াসি উদ্দিন তামী বলেন, এখানে যেটা বললাম কেউ যদি চাপ সৃষ্টি করে এখনই ডাকসু লাগবে কিংবা কেউ যদি বলে আমি ডাকসু চাইনা কোনোটাই উচিত হবে না। এবং ডাকসুকে কার্যকরী করার জন্য বা অংশগ্রহণমূলক করার জন্য এবং গণতান্ত্রিক করার জন্য যা যা করার দরকার আমার মতে ছাত্র সংগঠনগুলোর ঐকমত্যের ভিত্তিতে সেগুলোই করা উচিত।’
কোনো চ্যালেঞ্জ নেই সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন আয়োজনের উল্লেখ করে প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তা জানান, নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য যা যা দরকার- সব ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনের প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তা অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন বলেন, ‘আমাদের তরফ থেকে কোনো গাফিলতি নাই, একটা সুষ্ঠু ফ্রি, ফেয়ার, ইনক্লুসিভ ইলেকশন করার জন্য যত ধরনের প্রচেষ্টা দরকার, ব্যবস্থা নেয়া দরকার আমরা সেটা নিচ্ছি। এখন পর্যন্ত কোনো চ্যালেঞ্জ আমরা দেখছি না।’