ভোটের আলোচনায় নির্বাচনকালীন সময় নির্বাচন কমিশনারের (ইসি) ভূমিকা, আরপিও নিয়ে তোরজোড় দেখা যায়। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ বা আরপিওতে কীভাবে একটি নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে তা উল্লেখ থাকলেও আওয়ামী লীগ আমলের সবশেষ তিনটি নির্বাচন আরপিওর বিধানকে তোয়াক্কা করে দিনের ভোট রাতে অনুষ্ঠিত করেছে।
তবে অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে বাংলাদেশ যখন একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের স্বপ্ন দেখছে তখন আওয়ামী আমলের দলীয়করণের কালিমা থেকে ইসিকে মুক্ত করে জনগণের আস্থায় ফেরাতে উদ্যোগী বর্তমান নাসির কমিশন। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে না ভোট ফিরিয়ে আনা, ইভিএম সম্পর্কিত সব বিধান বাতিল, হলফনামার তথ্য গোপনের শাস্তি, রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ হলে সেই দলের নিবন্ধন বাতিলের সিদ্ধান্ত বাতিলের মত গুরুত্বপূর্ণ সংশোধনী এনেছে নির্বাচন কমিশন।
ইসির এ সিদ্ধান্তকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছে বিএনপি, জামায়াত, এনিসিপি, এবি পার্টির মতো দলগুলো। না ভোট ফিরিয়ে আনায় যোগ্য প্রার্থীর সংখ্যা বাড়বে বলে মনে করছেন বিএনপি চেয়ারপারসন উপদেষ্টা হারুনুর রশিদ। আর এবি পার্টির সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান ফুয়াদের মত, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পূর্বেই সশস্ত্র বাহিনীকে নিযুক্ত করলে নিরপেক্ষ ভোটের পরিবেশ তৈরি সম্ভব হবে।
হারুনুর রশিদ বলেন, ‘অনেকক্ষেত্রে দেখা যাবে যেসকল প্রার্থী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে তার চেয়েও যোগ্য প্রার্থী হয়তো বিভিন্ন দল থেকে নমিনেশন নাও পেতে পারে। সেক্ষেত্রে ওই দলেরেই ভোটাররা, ওই দলেরই সমর্থকরা না ভোট দেয়ার সুযোগটা পেতে পারে।’
আসাদুজ্জামান ফুয়াদ বলেন, ‘এখনই যদি ৮০ হাজার ফোর্স না নামান, তাহলে নির্বাচনের প্রচারণার মধ্যে যে ভায়োলেন্সটা হবে তা ডিল করা যাবে না। সেজন্য আমরা নির্বাচন কমিশনকে বলছি, এটা তফসিল ঘোষণার পরে না, এখন থেকেই মাঠে নামানো প্রয়োজন। আমি বোধ করি এটাকে দ্বিগুণ করা দরকার।’
আরও পড়ুন:
জামায়াত নেতা ও দলটির আইনজীবী শিশির মনির মনে করেন, নির্বাচন কমিশন আরপিও সংশোধনের মধ্যে দিয়ে প্রমাণ করেছে হারানো মেরুদণ্ড ফিরে পেয়েছে নির্বাচন কমিশন। অন্যদিকে এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন আরপিও সংশোধনকে ও না ভোটকে স্বাগত জানালেও জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ছাড়া নির্বাচন না যাবার ঘোষণা দিয়েছেন।
আখতার হোসেন বলেন, ‘যদি আমরা সংস্কারবিহীন নির্বাচনের দিকে অগ্রসর হই, সেজন্য নির্বাচনের যে সময়কাল বলা হয়েছে, তাতে আমাদের আপত্তির জায়গা নেই। কিন্তু সংস্কারকে পাশ কাটিয়ে যদি নির্বাচন করা হয় সেখানে অবশ্যই আমরা আপত্তি করবো।’
শিশির মনির বলেন, ‘আরপিও সংশোধন করে যা করা হচ্ছে, তাতে মনে হচ্ছে বাংলাদেশে নির্বাচন কমিশন যে মেরুদণ্ড নিয়ে বেঁচে আছে, তা তার প্রমাণ। পৃথিবীতে নির্বাচন কমিশনগুলো এত শক্ত ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়, যেখানে তৎকালীন সরকার বা প্রার্থীরা ভয়ে অতিষ্ট থাকে।’
রাজনৈতিক বিশ্লেষক আশরাফের কায়সারের মতে, নির্বাচন কমিশন তার আরোপিত ক্ষমতার যথাযথ প্রয়োগের মধ্যে দিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেই নির্বাচনের মাঠ ভোটার ও রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষে থাকবে।
আশরাফ কায়সার বলেন, ‘এই ক্ষমতাগুলো তাদের দারুণ প্রতিষ্ঠান হিসেবে সামনে এগিয়ে রাখবে। দুই তিনটা ঘটনা ঘটাতে পারলে বাংলাদেশের ইতিহাসে নির্বাচন কমিশন গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান হয়ে উঠবে। আমরা মনে করি এই আরপিও সংশোধনী ইতিবাচক। এতে নির্বাচনের মাঠ জনগণের পক্ষে থাকবে, ভোটারদের পক্ষে থাকবে।’
গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে নির্বাচনী বিভিন্ন অপরাধের জন্য কী কী শাস্তি আছে তার উল্লেখ থাকলেও বাস্তবতা হলো অতীতে নির্বাচনের মাঠে এগুলোর যথাযথ ব্যবহার খুব কম লক্ষ্য করা গেছে। এখন দেখার বিষয়, কেএম নাসিরুদ্দিনের নেতৃত্বাধীন কমিশন ভোটের মাঠে আরপিওর বিধান কতটুকু বাস্তবায়ন করতে পারে।