নতুন মৌসুম নতুন উন্মাদনা। দেশি বিদেশি ফুটবলারদের দলবদলসহ আসন্ন মৌসুমে কোন ক্লাব কত বড় বাজেট করেছে তা নিয়ে রীতিমত হৈচৈ পড়ার কথা, অথচ এবার চিত্রটা একবারে ভিন্ন। বিশেষ করে বাংলাদেশ ফুটবলের ক্রান্তিকালেও দেশের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনে বেশিরভাগ ক্লাবের আর্থিক দুরবস্থা অপরিবর্তনীয়।
দেশের ঐতিহ্যবাহী ক্লাব মোহামেডান। ২০০৭ সালে পেশাদার লিগ শুরুর পর গেলো আসরে প্রথম ঘরোয়া ফুটবলে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার খেতাব অর্জন করে ক্লাবটি। তবে সাফল্যের নায়কদের অগ্রণী সুলেমান দিয়াবাতেকে আর্থিক সংকটে ধরে রাখতে পারেনি মোহামেডান। এমনকি গেলো মৌসুমের অর্থ পকেটে পুড়া ছাড়াই নতুন মৌসুমে অনেকটা বাধ্য হয়েই খেলতে রাজি হয়েছে মোহামেডানের বেশিরভাগ খেলোয়াড়।
মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের ফুটবলার সাকিব আল হাসান বলেন, ‘আমাকে বলা হয়েছে টাকা দিবে। যারা যারা গতবার খেলেছিল এবং এ বছরও ক্লাবের সঙ্গে থাকবে তাদের টাকা যোগ করা হবে। আর যাদের ছেড়ে দিয়েছে তাদের টাকা তো পায়নি।’
মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের কোচ আলফাজ আহমেদ বলেন, ‘আমাদের গতবছর মোজাফফর ছিলো এবং বয়েটিং সেও এ বছর কনফার্ম হয়েছে। যত ভালো বেশি প্লেয়ার থাকে চ্যাম্পিয়নের জন্য তত প্রেশার থাকে। আমাদের এ বছর যে টিম তা নিয়ে আমরা চ্যাম্পিয়নশিপের জন্য লড়বো। চেষ্টা থাকবে চ্যাম্পিয়নশিপ ধরে রাখার।’
আরও পড়ুন:
এছাড়া গেলো ৪ বছর ধরে ক্লাবের নির্বাচন না হওয়ায় নতুন মৌসুম শুরুর আগে দল গোছাতে হিমশিম অবস্থা অভিভাবকশূন্য ক্লাবটির। এজন্য অবশ্য নীতি নির্ধারকদের উপরই দায় চাপিয়েছেন ক্লাবের সদস্য সাইদ হাসান কানন।
মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের সদস্য সাইদ হাসান কানন বলেন, ‘ক্লাবের এখন কমিটি নেই। নেই আবার আছে যেহেতু এটার মেয়াদ শেষ। একটা টিম করতে হলে মিনিমাম ৩ থেকে ৪ কোটি টাকা নিয়ে নামতে হয় সে জায়গায় আমাদের ৩০ লাখ টাকাও এখন নাই এমন অবস্থা। ক্লাব উন্নয়নের জন্য অবশ্যই বোর্ডের একটা প্লান থাকবে যে আগামী ৫ বা ৭ বছরে ক্লাবটা একটা পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া হবে।’
এদিকে গেলো আসরে লিগ টেবিলে আটে থাকা ফকিরেরপুল ইয়াংমেন্স ক্লাবের অবস্থাও সঙ্গীণ। ৫ আগস্টের পর এখনও নিজেদের সেভাবে গুছিয়ে উঠতে পারেনি। সম্প্রতি উজবেকিস্তানের ফুটবলারের অর্থ পরিশোধ করে ফিফার নিষেধাজ্ঞা থেকে মুক্তি মিললেও অর্থ সংকটে নতুন মৌসুমের আগে কপালে চিন্তার ভাজ ফকিরেরপুল ইয়াংমেন্স ক্লাবের।
ফকিরেরপুল ইয়াংমেন্স ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আহমেদ আলী বলেন, ‘বিপিএলটা এ বছর খেলতে পারলে আমরা আশাবাদী যে কিছু স্পন্সর পাবো। আমাদের আর্থিক অবস্থা খুব খারাপ।’
এদিকে ফকিরেরপুলের নিষেধাজ্ঞা কাটায় প্রিমিয়ার লিগ বিপিএলে খেলার সুযোগ শেষ হয়ে গেলো গত মৌসুমে অবনমিত ঢাকা ওয়ান্ডারার্সের। তবে আর্থিক অবস্থা ভালো থাকা ক্লাবটির আশা বাফুফে সদিচ্ছা থাকলেই দল বাড়িয়ে প্রতিদ্বন্ধিতামূলক আসর আয়োজন করা সম্ভব।
ঢাকা ওয়ান্ডারার্স ক্লাবের সহ-সভাপতি মোহাম্মদ সেলিম বলেন, ‘এখন আমরা চাইবো কোনোভাবে যদি ফকিরাপুল অংশগ্রহণ করে তাহলে ১০টার জায়গায় ১২টা টিম করে নিক, লিগে অংশগ্রহণ হোক। আমরা চেষ্টা করবো। ৪ কোটি টাকা আমাদের বাজেট। প্রায় ২৫ লাখ মতো আমরা চুক্তিবদ্ধ করেছি খেলোয়াড়দের। এছাড়া বাকি তো আরও অনেক খরচ।’
তবে এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো ভাবনা নেই ফেডারেশনের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বাফুফের লিগ কমিটির কো চেয়ারম্যান জাকির হোসেন।
আরও পড়ুন:
বাফুফে লিগ কমিটির সহ-সভাপতি জাকির হোসেন বলেন, ‘১০টার পরে এখন আর বাড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। ১০টা দিয়েই খেলতে হবে।’
এদিকে বাফুফের লিগ কমিটির নতুন নিয়ম সার্কভুক্ত দেশের ৫ ফুটবলারকে কোনো ক্লাব ভেড়ালে তা স্থানীয় বলেই গণ্য হবে। তবে নতুন মৌসুমে বসুন্ধরা,মোহামেডানের মতো ক্লাবগুলো সেদিকে না হাটলেও ওয়ান্ডারার্সের পরিকল্পনা ব্যতিক্রম।
ঢাকা ওয়ান্ডারার্স ক্লাবের সহ-সভাপতি মোহাম্মদ সেলিম বলেন, ‘৮ থেকে ১০ জন খেলোয়াড় আমরা তৈরি করি। একজন খেলোয়াড় তো আর এক বছরে তৈরি হয়না। আমাদের এ ক্লাবে এখনো ১৫ জনের মতো খেলোয়াড় আছে যাদের আমরা ট্রেনিং দিচ্ছি।’
বসুন্ধরা কিংসের সভাপতি ইমরুল হাসান বলেন, ‘কাউকেই দলভুক্ত করিনি। এ বছর অন্তত সার্ক অঞ্চলে কাউকেই নিচ্ছি না।’
মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের কোচ আলফাজ আহমেদ বলেন, ‘প্রথম লিগটা দেখবো, এরপর সেকেন্ড লিগে গিয়ে হয়তো আমরা চিন্তাভাবনা করবো রেজাল্টের ওপরে।’
১৪ আগস্ট শেষ হবে আসন্ন মৌসুমের দলবদল। এরপরই দেখা যাবে কৌশলী চিন্তাভাবনায় কোন ক্লাব কত শক্তিশালী দল গঠন করতে সক্ষম হয়েছে।