দেশে প্রথমবার ফ্রি ট্রেড জোন স্থাপনে কাজ শুরু হয়েছে চট্টগ্রামে

দেশে প্রথমবার ফ্রি ট্রেড জোন স্থাপন
দেশে প্রথমবার ফ্রি ট্রেড জোন স্থাপন | ছবি: সংগৃহীত
0

দেশে প্রথমবার মুক্তবাণিজ্য অঞ্চল বা ফ্রি ট্রেড জোন স্থাপনে কাজ শুরু হয়েছে চট্টগ্রামে। বন্দর, বিমানবন্দর, স্পেশাল ইকোনমিক জোনের সম্ভবনা কাজে লাগিয়ে এ ট্রেড জোন করতে চায় চট্টগ্রাম বন্দর। এজন্য ৪০০ একর জায়গা নির্ধারণ করা হয়েছে আনোয়ারায় কর্ণফুলী নদীর ওপারে। কর্তৃপক্ষ বলছে, এফটিজেড হলে শিল্প মালিকরা স্থানীয় ঋণপত্রে, দেশিয় মুদ্রায় তুলাসহ শিল্পের প্রয়োজনীয় কাঁচামাল সংগ্রহ করতে পারবেন। কমবে আমদানির খরচ ও সময়।

বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ, স্থানীয় শিল্পের বিকাশ ও বাণিজ্যের আকার বাড়াতে বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় হচ্ছে মুক্তবাণিজ্য অঞ্চল। ২০১৩ সালে, চীন সাংহাই মুক্তবাণিজ্য অঞ্চল চালুর পর বিনিয়োগ বাড়ায় পর্যায় ক্রমে ২১টি মুক্তবাণিজ্য অঞ্চল গঠন করে । সংযুক্ত আরব আমিরাতের জেবেল আলী ফ্রি জোনও দেশি-বিদেশি বিনিয়োগের হাব হিসাবে ব্যাপক সাড়া পেয়েছে।

শুল্ক জটিলতা এড়িয়ে বাণিজ্য বান্ধব পরিবেশ তৈরিতে বাংলাদেশেও মুক্তবাণিজ্য অঞ্চল স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে অন্তবর্তী সরকার। প্রধান সমুদ্র বন্দরের অবস্থানের ফলে এক্ষেত্রে এগিয়ে চট্টগ্রাম। মিরসরাইয়ে সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক অঞ্চল, তিনটি ইপিজেডসহ চট্টগ্রামে ২ হাজার শিল্প কারখানার জন্য কাঁচামালের চাহিদা থাকে বছরজুড়ে।

এই প্রেক্ষাপটে চট্টগ্রামে ফ্রি জোন স্থাপনে আগ্রহ দেখাচ্ছে বিদেশ বিনিয়োগকারীরা। সরকারের নির্দেশনায় এরই মধ্যে কাজ শুরু করেছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। প্রাথমিকভাবে চট্টগ্রামের আনোয়ারায় টানেলের ওপারে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড ও বন্দরসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ৪০০ একর জায়গা ফ্রি ট্রেড জোনের জন্য বন্দরকে বরাদ্দ দিতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয়া হয়েছে।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব ওমর ফারুক বলেন, ‘এইটা হলে সারা বছরব্যাপী আমদানি ও সংরক্ষণ করা যাবে। আমাদের দেশিয় উদ্যোক্তা বা দেশিয় ব্যবসায়ী যারা আছে তার কার্গো নিয়ে তাদের কার্যক্রম করতে পারবে। ছোট আমদানিকারকদের জন্যও সুফল বয়ে আনবে।’

তবে মুক্তবাণিজ্য অঞ্চলে কেমন সুবিধা থাকবে, শুল্কায়নের প্রক্রিয়া কি হবে, শুল্কমুক্ত সুবিধা থাকবে কিনা, ফ্রি ট্রেড জোন কীভাবে কাজ করবে পূর্ণাঙ্গ নীতিমালায় থাকবে সব কিছু।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ বলছে, কাপড় তুলা, সুতা, এক্সেসরিজসহ শিল্পের প্রয়োজনীয় কাঁচামাল, যা সারা বছরই লাগে এমন পণ্য আমদানি করে এই ফ্রি ট্রেড জোনে রাখা যাবে।

ওমর ফারুক বলেন, ‘পরিপূর্ণ নীতিমালা প্রণয়ে কাজ চলমান আছে। সেখানে আমদানির বিষয়ে সবকিছু উল্লেখ থাকবে কি করতে পারবে আর পারবে না।’

বছরে বাংলাদেশ প্রায় ৫ থেকে ছয় বিলিয়ন ডলারের তুলা আমদানি করে। অনেক সময় কাঁচামাল যথাসময়ে হাত না পেলে কারখানা অলস বসে থাকতে হয়। ব্যবসায়ীরা বলছেন, এ ধরনের মুক্তবাণিজ্য অঞ্চল হলে শিল্প মালিকদের কাঁচামাল আমদানিতে ভোগান্তি কমবে। এজন্য সমন্বিত নীতিমালা প্রণয়ণের তাগিদ তাদের।

বাংলাদেশ ফ্রেইটফরওয়ার্ডার অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি খায়রুল আলম সুজন বলেন, ‘বড় কোনো ওয়ারহাউজ তুলা এনে এখানে স্টোর করে সেক্ষেত্রে কারখানা যারা তুলা থেকে সুতা উৎপাদন করে তাদের জন্য অনেক সুবিধা হবে। হ্যাসেল পোহাতে হতে হবে না।’

বিজিএমইএয়ের সাবেক প্রথম সহ-সভাপতি নাসিরুদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘ফ্রি ট্রেড জোন সবার সাথে কথা বলে বিদেশিদের মতো কার্যক্রম করা যায় এতে ব্যবসায়ীদের জন্য ভালো হবে।’

মুক্তবাণিজ্য অঞ্চলের পাশাপাশি বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়তে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সাথে মুক্তবাণিজ্য চুক্তি করার আহ্বান ব্যবসায়ীদের।

সেজু