মস্কো লক্ষ্য করে হামলা না চালাতে ইউক্রেনকেও ট্রাম্পের সতর্কবার্তা

ডোনাল্য ট্রাম্প, ভ্লাদিমির পুতিনের ফোনালাপ
ডোনাল্য ট্রাম্প, ভ্লাদিমির পুতিনের ফোনালাপ | ছবি: সংগৃহীত
0

পুতিনের শর্তে সম্মত হতে হবে পশ্চিমা বিশ্বকে। তা না হলে ইউক্রেনে লড়াই চালিয়ে যাবে রাশিয়া। যুদ্ধক্ষেত্রে রুশ সেনাদের অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকায় বাড়তে পারে পুতিনের আঞ্চলিক দাবি-দাওয়াও; ক্রেমলিনের ঘনিষ্ঠ সূত্রের বরাতে এমনটাই জানিয়েছে রয়টার্স। রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধে নতুন মার্কিন অস্ত্র সহায়তা ইউক্রেনের পথে রয়েছে জানিয়ে পুতিনের প্রতি ক্ষোভ জানিয়েছেন ট্রাম্প। যদিও, মস্কো লক্ষ্য করে হামলা না চালাতে ইউক্রেনকেও সতর্ক করেছেন তিনি। এদিকে, যুদ্ধের মধ্যেই ইউক্রেন সরকারে বড় ধরনের রদবদলের অংশ হিসেবে পদত্যাগ করেছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী।

ইউক্রেনে যুদ্ধ বন্ধে রাশিয়াকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ৫০ দিনের সময় বেঁধে দেয়ার পর মঙ্গলবার বিশ্ববাজারে প্রায় এক শতাংশ দরপতন হয় জ্বালানি তেলের। প্রতিক্রিয়ায় ৫০ দিনের তাৎপর্য কী, প্রশ্ন মস্কোর।

রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ বলেন, এই ৫০ দিন সংক্রান্ত বিবৃতির পেছনের ব্যাখ্যাটা বুঝতে চাই আমরা। প্রথমে ২৪ ঘণ্টা, তারপর ১০০ দিনও বলা হয়েছিল। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের উদ্দেশ্যটা আমরা সত্যি বুঝতে চাই।’

ইউক্রেনে অস্ত্রবিরতিতে সম্মত না হলে, বড় ধরনের শুল্কারোপের হুমকি মস্কোকে চাপে ফেলবে বলে প্রত্যাশা ছিল ট্রাম্পের। যদিও, হয়েছে এর উল্টো। ট্রাম্পের বিবৃতিকে 'খুব গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে এটি বিশ্লেষণের জন্য সময় চেয়েছে ক্রেমলিন। পাশাপাশি শুল্কারোপে ৫০ দিনের বিরতিতে স্বস্তির পরিবর্তে যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর পদক্ষেপ মোকাবিলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন মস্কোর বিনিয়োগকারীরা।

রাশিয়ার ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকোভ বলেন, ‘মার্কিন প্রেসিডেন্টের বক্তব্য বেশ গুরুতর। মনে হচ্ছে যে কিছু বিষয় ব্যক্তিগতভাবে প্রেসিডেন্ট পুতিনকে উদ্দেশ্য করে বলা হয়েছে। ওয়াশিংটন কী বলেছে, তা বুঝতে আমাদের সময় দরকার। প্রয়োজন মনে করলে প্রেসিডেন্ট পুতিন অবশ্যই এ বিষয়ে মন্তব্য করবেন।’

এদিকে, ক্রেমলিনের ঘনিষ্ঠ সূত্রের বরাতে বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক বিশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের শর্তে সম্মত হতে হবে পশ্চিমা বিশ্বকে।

তা না হলে ইউক্রেনে লড়াই অব্যাহত রাখবে রাশিয়া। অস্ত্রবিরতিতে পুতিনের অসম্মতিতে হতাশ ট্রাম্প, সোমবার ইউক্রেনকে নতুন করে সামরিক সহায়তার ঘোষণা দেয়ার পর মঙ্গলবারই জানান, এরইমধ্যে ইউক্রেনের পথে অস্ত্র সহায়তা। যদিও মস্কো লক্ষ্য করে হামলা না চালাতে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে সতর্কও করে দিয়েছেন ট্রাম্প।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, ‘যদি আমরা কোনো চুক্তিতে পৌঁছাতে পারি, তবে খুব ভালো হবে। প্রতি সপ্তাহে ছয় হাজার করে সেনার প্রাণ রক্ষা করছি আমরা। রাশিয়ার সেনারাও আছে এ তালিকায়, ইউক্রেনের সেনারাও আছে। মার্কিন সেনা নেই। যুদ্ধক্ষেত্রে আমাদের পা পড়েনি। কিন্তু তাও এ যুদ্ধ লজ্জার।’

এদিকে, যুদ্ধক্ষেত্রে রুশ সেনারা এগিয়ে যেতে থাকায় বাড়তে পারে পুতিনের আঞ্চলিক দাবিদাওয়া- এমনটাই বলা হচ্ছে রয়টার্সের প্রতিবেদনে। ২০১৪ সালে নিয়ন্ত্রণে নেয়া ক্রিমিয়া উপদ্বীপের পাশাপাশি ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলের লুহানস্ক, দোনেৎস্কের ৭০ শতাংশ, ঝাপোরিঝিয়া ও খারসন অঞ্চল এবং খারকিভ, সুমি ও দিনিপ্রো পেত্রোভস্কের ছোট ছোট অংশ বর্তমানে রাশিয়ার দখলে।

ক্রিমিয়া এবং পূর্ব ইউক্রেনের এই পাঁচ অঞ্চল রাশিয়ার বলে স্বীকৃতি এবং সেখান থেকে কিয়েভের সেনা প্রত্যাহার চান পুতিন। স্বাভাবিকভাবেই এতে সম্মত নয় ইউক্রেন বা পশ্চিমা মিত্র দেশগুলো। এমন পরিস্থিতিতে মঙ্গলবার রাশিয়ার বিরুদ্ধে নতুন নিষেধাজ্ঞা অনুমোদনের পদক্ষেপ নেয়া হলেও ব্যর্থ হয় ইউরোপীয় ইউনিয়ন। ব্রাসেলসের পার্লামেন্টে জোটভুক্ত পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা এক হলেও গ্যাস আমদানি ইস্যুতে বিলে ভেটো দেয় স্লোভাকিয়া।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রনীতি প্রধান কাজা কালাস বলেন, ‘রাশিয়ার বোমা হামলা রেকর্ড মাত্রায় পৌঁছেছে এবং আমরা ইউক্রেনে রাশিয়ার নিষিদ্ধ রাসায়নিক অস্ত্রের ব্যবহার বাড়তে দেখছি। এসবকিছুই প্রমাণ যে রাশিয়া শান্তি চায় না এবং এর প্রতিক্রিয়ায় ইইউ রাশিয়ার বিরুদ্ধে কঠোরতম নিষেধাজ্ঞা অনুমোদনে প্রস্তুত। তাই আমি সত্যি দুঃখিত যে আমরা আজ এই চুক্তিতে পৌঁছাতে পারলাম না।’

অন্যদিকে, যুদ্ধের মধ্যেই ইউক্রেন সরকারে চলতি সপ্তাহে বড় ধরনের রদবদলের অংশ হিসেবে পদত্যাগপত্র জমা দেয়ার কথা জানিয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী ডেনিস শ্মিহাল। মঙ্গলবারও খারকিভ, সুমি, দোনেৎস্কসহ বিভিন্ন অঞ্চলে হামলা চালিয়েছে রাশিয়া, হতাহত হয়েছে অনেকে। অন্যদিকে, রাশিয়ার পশ্চিমাঞ্চলীয় ভোরোনেজ শহরে ড্রোন হামলা চালিয়েছে ইউক্রেন। রাতভর রাশিয়ার পাঁচটি অঞ্চলে এবং কৃষ্ণসাগরে ইউক্রেনের ৫৫টি ড্রোন ভূপাতিত করার দাবি জানিয়েছে রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়।

সেজু