ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন হতে পারে ৮ ফেব্রুয়ারি?

নির্বাচনের তারিখ নিয়ে বিশ্লেষকদের ভাবনা
নির্বাচনের তারিখ নিয়ে বিশ্লেষকদের ভাবনা | ছবি: এখন টিভি
2

নির্বিঘ্নে ভোটগ্রহণ ও সহিংসতা এড়াতে ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে কোনো সপ্তাহের প্রথম কিংবা শেষ কার্যদিবসে নির্বাচন আয়োজনের পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের। রমজানের আগে শপথগ্রহণসহ আনুষঙ্গিক কাজ বিবেচনায় বিশ্লেষকদের মত, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হতে পারে ৮ ফেব্রুয়ারি। নির্বাচনী রোডম্যাপকে বিএনপিসহ প্রায় সব দল স্বাগত জানালেও এখনও রয়ে গেছে কিছু—যদি, কিন্তু। জামায়াতের দাবি, জুলাই সনদের ভিত্তিতেই হতে হবে নির্বাচন, আর এনসিপি চায় লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড।

ডিসেম্বরের প্রথমার্ধে তফসিল ঘোষণা— এরই মধ্যে এমন বক্তব্য এসেছে নির্বাচন কমিশন থেকে। আর প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) আরও স্পষ্ট করে বলেন, ‘ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধেই নির্বাচন।’

রেওয়াজ অনুযায়ী, তফসিল ঘোষণা থেকে নির্বাচনের মধ্যে ৪০ থেকে ৪৫ দিনের পার্থক্য থাকে। এবার সেটি ৬০ দিনে গিয়েও ঠেকতে পারে। যদি তাই হয় তাহলে নির্বাচন কবে—সে প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে সবার মনে।

নির্বাচন বিশ্লেষকরা বলছেন, একই দিনে সারাদেশে নির্বিঘ্নে ভোটগ্রহণ ও সহিংসতা এড়াতে সপ্তাহের প্রথম ও শেষ কার্যদিবস ভালো দিন। সেক্ষেত্রে ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে ১, ৮ ও ১৫ তারিখ যেহেতু রোববার এবং ৫ ও ১২ তারিখ বৃহস্পতিবার। ১৭ কিংবা ১৮ তারিখ শুরু রমজান। তাতে ভোট গ্রহণের পর, রমজানের আগে শপথ গ্রহণসহ নতুন সরকারের আনুষঙ্গিক কাজ শেষ করতে চাইলে, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সবচেয়ে ভালো দিন হতে পারে ৮ ফেব্রুয়ারি।

নির্বাচন বিশেষজ্ঞ ড. আব্দুল আলীম বলেন, ‘বিপুল সংখ্যক ভোটার যারা শহরাঞ্চলে থাকে— ঢাকা, গাজীপুর, চট্টগ্রাম; তারা কিন্তু এসব এলাকার ভোটার নয়। তারা যদি লম্বা ছুটি পায়, তাহলে তারা ভোট দেয়ার জন্য নিজ ভোটার এলাকায় যাবে। তাই দিনটা যদি বৃহস্পতিবার বা রোববারে হয়, তাহলে সেটা সবার জন্যই ভালো হয়। সেক্ষেত্রে ধরে নেয়া যায়, ফেব্রুয়ারির প্রথম দিকেই, আমার ধারণা ১ থেকে ১০ তারিখের মধ্যেই নির্বাচনটা হয়ে যাবে।’

আরও পড়ুন:

এদিকে রাজনৈতিক দলগুলোও সেভাবেই নিচ্ছে প্রস্তুতি। এনসিপি বলছে, যেকোনো তারিখে হতে পারে নির্বাচন তবে তফসিল ঘোষণার আগেই আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির দৃশ্যমান উন্নতি ও লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি জরুরি।

এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক জাবেদ রাসিন বলেন, ‘যার একটু টাকা বেশি, সে হয়তো তার জনসভায় হাজার হাজার লোক আনছে। কিন্তু যার টাকা নেই সে আনতে পারছে না। ওটা তখন ভোটে একটা প্রভাব ফেলে। সেজন্য আমরা বলছি, একই ডিজাইনে একইভাবে, একই মঞ্চে যেন সবাই নির্বাচনী প্রচারণা চালাতে পারে; সেই ধরনের ব্যবস্থা নিলে এবং একই সঙ্গে সংস্কারটাকে বাস্তবায়ন করতে পারলে, বিচার প্রক্রিয়াটা দৃশ্যমান হলে নির্বাচনের স্কেজিউল নিয়ে আমাদের দিক থেকে কোনো আপত্তি নেই।’

তফসিল ঘোষণার সময়সীমাকে স্বাগত জানিয়েছে জামায়াতে ইসলামী। তাদের দাবি, জুলাই সনদের ভিত্তিতে হতে হবে নির্বাচন।

জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, ‘ইলেকশনের টাইমলাইন করেছেন, মোস্ট ওয়েলকাম। কিন্তু ইলেকশনটা হতে হবে জুলাই সনদের ভিত্তিতে। এই সরকারকেই এটা বাস্তবায়ন করে দেখাতে হবে, আমরা এটা বলেছি। দ্বিতীয়ত, ইলেকশন যদি করতে হয়, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড আনতে হবে।’

পোস্টাল ভোটের ব্যবস্থা ভালো চিন্তা উল্লেখ করে বিএনপি বলছে, তফসিলের আগে আরপিও সংশোধনসহ যেকোনো সিদ্ধান্তে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা হতে পারে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘তফসিল ঘোষণার আগ পর্যন্ত নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সব রাজনৈতিক দলের আলাপ হতে পারে, এটা প্রক্রিয়া। যেগুলোর ক্ষেত্রে আইন সংশোধনের বিষয় আছে, সেগুলো অর্ডিনেন্সের মাধ্যমে প্রতিনিয়তই হয়ে যাচ্ছে, সেটা হতে পারে। এগুলো সবকিছুই একটা সুষ্ঠু, সুন্দর, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য প্রয়োজন। প্রবাসীদের ভোটের ক্ষেত্রে যেটা বলা হয়েছে যে, পোস্টাল ব্যালটে শুধু মার্কাটা থাকবে, প্রার্থীদের নাম থাকবে না—এটাও একটা খুব চমৎকার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এই প্রস্তাবগুলো খুবই উত্তম, যাতে কোনো নাগরিক তার সরকারি দায়িত্ব পালনের কারণে ভোট বঞ্চিত না হয়।’

তফসিল ঘোষণার সময়সীমা নির্ধারণ হওয়ার ফলে নির্বাচন কমিশনের পাশাপাশি চ্যালেঞ্জ বাড়ছে অন্তর্বর্তী সরকারেরও। ভোটার তালিকা প্রস্তুত, সংসদীয় আসন পুনর্বিন্যাস, নতুন দল ও পর্যবেক্ষক সংস্থার নিবন্ধন কাজ যেমন তফসিল ঘোষণার আগে নির্বাচন কমিশনকে শেষ করতে হবে তেমনি সরকারকে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরির ক্ষেত্রে নির্বাচন ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত অন্য রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে সক্রিয় করতে হবে। তাহলেই সম্ভব কাঙ্ক্ষিত নির্বাচন।

এসএইচ