জুলাই ঘোষণা ও জুলাই সনদের আইনগত ভিত্তি প্রদান এবং এর আলোকে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ মিছিল করেছে জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ।
বুধবার রাজধানীর বিজয়নগরে প্ল্যাকার্ড ও দলীয় প্রতীক দিয়ে সমাবেশস্থলে আসতে থাকে ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন থানা ওয়ার্ডের নেতা কর্মীরা। এসময় তারা দলীয় স্লোগান দেন।
কিছু রাজনৈতিক দল জনগণের সমর্থন নিয়ে ক্ষমতায় যেতে চায় কিন্তু জনগণের ভোটের মূল্যায়ন চায় না মন্তব্য করে জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগর উত্তরের আমির সেলিম উদ্দিন জানান, ৯০ ভাগ মানুষ পিআরের পক্ষে প্রয়োজনে অন্তর্বর্তী সরকারকে গণভোট দেয়ার দাবি জানান তিনি।
সেলিম উদ্দিন বলেন, ‘১৪, ১৮, ২৪ এর মতো নির্বাচন চায়না জামায়াতে ইসলামী। এর মধ্যে দিয়ে ফ্যাসিস্ট তৈরি হয়। জামায়াতে ইসলামী আজকের সমাবেশ ডাকতে বাধ্য হয়েছে। বাংলাদেশের প্রত্যেকটি নাগরিকের ভোটের মূল্যায়ন হবে। কিছু রাজনৈতিক দল জনগণের সমর্থন নিয়ে ক্ষমতায় যেতে চায় কিন্তু জনগণের ভোটের মূল্যায়ন চায় না।’
তিনি বলেন, ‘অবিলম্বে রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশের মাধ্যমে জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি দিয়ে নির্বাচন দিতে হবে। লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড আদায়, জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি, পিআর পদ্ধতি বাস্তবায়নে প্রয়োজনে লাগাতার কর্মসূচি দেয়া হবে।’
কোনো বিশেষ রাজনৈতিক দলের আনুগত্য করলে কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেন দক্ষিণের আমির নুরুল ইসলাম বুলবুল। জানান, সরকার একটি অপরিপূর্ণ ঘোষণাপত্র দিয়েছেন যেখানে পিলখানা, শাপলা হত্যাকাণ্ড এবং বিচারিক হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি উল্লেখ না থাকায় সরকারের সমালোচনা করেন।
নুরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা একটি অপরিপূর্ণ ঘোষণাপত্র দিয়েছেন। যেখানে পিলখানা হত্যাকাণ্ড, শাপলা হত্যাকাণ্ড, বিচারিক হত্যাকাণ্ডের বিষয় রাখা হয়নি। শিগগিরই জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি দিতে হবে।’
জামায়াতে ইসলামী নির্বাচনে অংশ নিতে প্রস্তুত তবে কারচুপির নির্বাচন, হাসিনা মার্কা নির্বাচন হলে তা বরদাশত হবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন দলটির সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল রফিকুল ইসলাম খান। জানান, সংবিধান সংশোধন, সংস্কার, সনদের জন্য এ সরকারকে বসানো হয়েছে তবে কেন এ সরকারের কাছে নিরপেক্ষ নির্বাচনের কথা বলতে হবে? প্রশ্ন রাখেন সরকারের প্রতি।
রফিকুল ইসলাম খান বলেন, ‘প্রস্তুতি শুরু করেছে জামায়াত। এখনই নির্বাচন দেন, আমরা লড়বো। কিন্তু কারচুপির নির্বাচন, কোনো ষড়যন্ত্র মেনে নেয়া হবে না। কেন এ সরকারের কাছে নিরপেক্ষ নির্বাচনের কথা বলতে হবে? সরকারি অফিসগুলো একটা দলের কার্যালয়ে পরিণত হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘সংবিধান সংশোধন, সংস্কার, সনদের জন্য আপনাদের বসানো হয়েছে। জনগণের মতের বাইরে কাজ করলে জনগণ বরদাস্ত করবে না। সুষ্ঠু ভোটের জন্য পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন দিতে হবে। হাসিনা মার্কা নির্বাচন করতে দেয়া হবে না।’
আরেকটি ওয়ান ইলেভেনের পেক্ষাপট তৈরি না করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন জামায়াতের নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুলাল্লাহ মো. তাহের। জানান, আলোচনার মাধ্যমে সরকারকে সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন দিতে হবে।
ডা. সৈয়দ আব্দুলাল্লাহ মো. তাহের বলেন, ‘এ সরকারের প্রথম সংস্কার দরকার ছিল মন্ত্রী, উপমন্ত্রী যে চেয়ারে বসে সেখানে আগে সংস্কার দরকার ছিল।’
তিনি বলেন, ‘৫৪ বছরে দেশের মানুষ সুষ্ঠু নির্বাচন পায়নি। আমরা ইলেকশন চাই সিলেকশন চাই না। দেশের মানুষ একটি সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। বিদেশি স্টাইলে নির্বাচন চায় না দেশের মানুষ। বিদেশি ডিজাইনে নির্বাচন হলে দেশের মানুষ রক্ত দিয়ে হলেও সুষ্ঠু নির্বাচন আদায় করে নিবে।’
জামায়াতের নায়েবে আমির বলেন, ‘যারা আগামী নির্বাচিত সরকারের মাধ্যমে জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি দিতে চায় তাদের উদ্দেশ্য ভালো নয়। তাদের উদ্দেশ্য “ডাল মে কুচ কালা হায়”। ৭১ শতাংশ মানুষ পিআর চায় এটাতে বিরোধিতা করার আপনাদের অধিকার নেই। সরকারকে বলবো আরেকটি ওয়ান ইলেভেনের পেক্ষাপট তৈরি করবেন না। আলোচনার মাধ্যমে সুষ্ঠু নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন দিতে হবে।’
সমাবেশ শেষে বিজয়নগর থেকে মিছিল বের করে দলটির নেতাকর্মীরা পরে মিছিলটি নাইটিংগেল মোড় প্রদক্ষিণ করে কাকরাইল মোড়ে এসে শেষ হয়।