আসন বণ্টন নিয়ে ক্ষোভ, জোট ছাড়ার ভাবনায় বিএনপির শরিক দল!

মুস্তাফিজুর রহমান ইরান, নুরুল হক নুর ও সৈয়দ এহসানুল হুদা
মুস্তাফিজুর রহমান ইরান, নুরুল হক নুর ও সৈয়দ এহসানুল হুদা | ছবি : এখন টিভি
0

নির্বাচনে প্রত্যাশিত আসন ছাড় না পাওয়ায় ক্ষোভ বাড়ছে বিএনপির সমমনা শরিক দলগুলোর। মূল্যায়ন না করায় কেউ কেউ জোট ছেড়ে নতুন জোটে যোগ দেয়ার কথাও ভাবছে। আর নির্বাচনে দলগুলোকে নিজস্ব প্রতীকে লড়তে হবে বলে সব জায়গায় জোটের প্রার্থী দেয়ার বাস্তবতা নেই বলে দাবি বিএনপির। আর জোটসঙ্গীদের ছাড়া এককভাবে জিতে আসবে এমন আত্মবিশ্বাস বিএনপিকে ভোটের মাঠে ক্ষতিগ্রস্ত করবে বল মত বিশ্লেষকদের।

গেলো সাড়ে ১৫ বছরে বিএনপির সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ হয়ে ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলন করেছে ছোট ছোট বিভিন্ন দল। কিন্তু চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানের পর যখন আগামী ফেব্রুয়ারিতে কাঙ্ক্ষিত জাতীয় নির্বাচনের দিকে যাচ্ছে দেশ, সেসময়ে বিএনপির সঙ্গে মিত্রদলগুলোর দূরত্ব যেমন তৈরি হচ্ছে, ক্ষেত্র বিশেষে ঘটছে বিচ্ছেদেরও ঘটনা।

এর কারণ হিসেবে দীর্ঘদিনের পরীক্ষিত মিত্র ও বিএনপির যুগপৎ আন্দোলনের জোটে থাকা অনেক দলের নেতারাই বলছেন ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিভিন্ন আসনে প্রার্থী ঘোষণায় শরিকদের মূল্যায়ন করেনি বিএনপি।

লেবার পার্টি, গণঅধিকার পরিষদ, ১২ দলীয় জোটের মতো শরিক দলগুলোর নেতাদের অভিযোগ, লিঁয়াজো কমিটির বৈঠকে আলোচনা না করেই বিএনপির প্রার্থী ঘোষণা রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতির বরখেলাপ। এটিকে স্বপ্ন দেখিয়ে হাওয়াই বাতাসা খাওয়ানোর সঙ্গে তুলনা করছেন নেতারা।

লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মুস্তাফিজুর রহমান ইরান বলেন, ‘আমাদের দল সরকারে গেলে অমুক করবেন তমক করবেন বলেন। তুমি নির্বাচনে ৩০০ আসনের ভেতরে আমাদের জোটকে দেয়ার মতো আসন খুঁজে পাচ্ছো না। আর আমাদের হাওয়াই বাতাসা খাওয়াবা এটি নিয়ে স্বপ্ন দেখাচ্ছো।’

গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর বলেন, ‘ছোট দল হলেও আমাদের একটি ব্যক্তিত্ব আছে। জাতির কাছে আমাদের একটি ইমেজ আছে। আমাদের একটি অবস্থান আছে। সুতরাং ছিটিয়ে দেয়া দুই এক আসনের বিনিময়ে আমরা কোনো রাজনৈতিক দলের পারপাস সার্ভ করবো বা জোট করবো আমরা এমন রাজনীতি করতে চাই না।’

১২ দলীয় জোটের সমন্বয়ক সৈয়দ এহসানুল হুদা বলেন, ‘বিএনপিতে যারা কমিটমেন্টে ছিলো, যারা ত্যাগী নেতা, আন্দোলনে সঙ্গে ছিলো, তাদের নিয়েই তো নির্বাচন করবেন। সেই জায়গায় আমাদের সঙ্গে ন্যূনতম আলোচনা করা হয়নি।’

এরইমধ্যে ক্ষোভ থেকে জোট ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছে লেবার পার্টি। সম্মানজনক জায়গা পেলে নতুন জোটে যোগ দেয়ার কথা ভাবছে গণঅধিকার পরিষদও। এমন অবস্থায় তফসিল ঘোষণার পর মিত্র দলগুলোর সঙ্গে দূরত্ব কমাতে হবে বলেও জানানদলটির সভাপতি।

আরও পড়ুন:

নুরুল হক নুর বলেন, ‘রাষ্ট্র সংস্কার এবং জনআকাঙ্ক্ষার বাস্তবায়নে আগামীতে আমরা সরকারের অংশিদার হতে চাই। অবশ্যই নায্যতার ভিত্তিতে সম্মানের ভিত্তিতে। জনআকাঙ্ক্ষাকে প্রাধান্য দিয়ে যারা আগামীতে রাজনীতিতে চিন্তা করবে তাদের সঙ্গেই আমরা নির্বাচন করবো, জোট হবে।’

মুস্তাফিজুর রহমান ইরান বলেন, ‘আমাদের জাতীয় স্বার্থ, দলীয় স্বার্থ এগুলো বিবেচনায় রেখে যদি কোনো দেশপ্রেমিক, ধর্মীয় মূল্যবোধে বিশ্বাসী কোনো জোটে যদি আমাদের যথাযথ মূল্যায়ন করা হয়, আমন্ত্রণ জানানো হয় সেগুলো আমরা বিবেচনা করবো।’

এমন অবস্থায় বিএনপির শীর্ষ নেতাদের দাবি নির্বাচনে দলগুলোকে নিজস্ব প্রতীকে লড়তে হবে বলে সব জায়গায় জোটের প্রার্থী দেয়ার বাস্তবতা নেই। জোটসঙ্গীদের অস্থির না হয়ে ধৈর্য ধারণের পরামর্শ দেন তিনি।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, ‘আমাদের তো ভোটের সমীকরণ করতে হবে। সমীকরণ করে যাদের যে জায়গায় দেয়া প্রয়োজন মনে করছি আমরা তাদের দিচ্ছি। যারা পাবে না তাদের অনেকভাবে প্রভাইড করতে পারবো। সুতরাং এটি নিয়ে যদি অস্থির হয়ে যান তাহলে তো কিছু করার নেই। আমাদের তো নির্বাচন করতে হবে, জিততে হবে তো। আমি তো হাতে তুলে অন্যকে এ আসনটি দিয়ে দিতে পারব না।’

তবে এ রাজনৈতিক বিশ্লেষক বলছেন, সমমনাদের অসন্তোষ ভোটে প্রভাব ফেলবে। বড় দল হিসেবে একাই জয় লাভ করবে, বিএনপির এমন অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস দলটিকে নির্বাচনে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. কাজী মারুফুল ইসলাম বলেন, ‘সে যদি মনে করে তার একার সামর্থ্যেই সে সমস্ত জায়গায় জয়লাভ করবে তাহলে সেটি নিজের শক্তির প্রতি অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস বলে মনে হবে। দ্বিতীয়ত ছোট দলগুলো যারা বিএনপির সঙ্গে অনেকদিন কাজ করেছে আন্দোলন করেছে।’

পুরনো মিত্রদের যথাযথ মূল্যায়ন না করলে বিএনপিবিরোধী বৃহত্তর জোট ভোটের মাঠে ব্যালটের হিসেব-নিকেশ পাল্টে দিতে পারে বলেও মত বিশ্লেষকদের।

এফএস