শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ঘিরে রাজশাহীতে জমজমাট মেস ব্যবসা, ভোগান্তিতে শিক্ষার্থীরা

মেসে শিক্ষার্থীরা পড়ালেখা করছে ও দেয়ালে মেসের পোস্টার
মেসে শিক্ষার্থীরা পড়ালেখা করছে ও দেয়ালে মেসের পোস্টার | ছবি: এখন টিভি
0

শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ঘিরে রাজশাহীতে জমজমাট মেস-ছাত্রাবাসের ব্যবসা। তবে এসব আবাসনে অতিমাত্রায় বাণিজ্যিকীকরণে ভোগান্তিতে শিক্ষার্থীরা। মেসের সুবিধা নিয়ে শিক্ষার্থী-মালিক উভয়ের আছে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ। এনিয়ে দ্রুতই নগর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বসতে চায় রাকসুসহ ছাত্র প্রতিনিধিরা।

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের আদলে ১৮৭৩ সালে প্রতিষ্ঠিত রাজশাহী কলেজ। তখন থেকেই শিক্ষানগর হিসেবে পরিচিত রাজশাহী।

কালের পরিক্রমায় এ নগর এখন কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, টেকনিক্যাল স্কুল, ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। এরকম ৮৬টি প্রতিষ্ঠানে লেখাপড়া করছে প্রায় ৯৩ হাজার শিক্ষার্থী। যাদের প্রায় ৭৫ শতাংশের নেই আবাসন সুবিধা।

শিক্ষার্থীদের আবাসন সংকটে যখন মেস-ছাত্রাবাসের নির্ভরতা বাড়ে, তখনি তৈরি হয় সিন্ডিকেটের। মেস মালিকদের জোটবদ্ধ হয়ে ভাড়া বাড়ানো, মেস না ছাড়তে শিক্ষার্থীদের বাধ্য করা এবং স্থানীয় প্রভাব আর অহেতুক বিধিনিষেধে জিম্মি করা হয় তাদের।

শিক্ষার্থীরা জানান, শিক্ষার্থীদের থেকে বেশি টাকা নিলেও খাবার ভালো দেয় না। রুমগুলোও পরিষ্কার থাকে না। টাকা দিলেও সঠিক সময়ে সার্ভিসিং পাচ্ছেন না তারা।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য বলছে তাদের শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ৩০ হাজার, যার ৭০শতাংশ থাকে এই ধরনের মেসগুলোতে। যেখানে হাতবাড়ালেই দেয়াল ছোঁয়া যায়। আর এরমধ্যেই শিক্ষার্থীদের আবেগ, অনুভূতি পড়াশোনা, তার পাশাপাশি আছে এ মেস গুলোনের নিত্য সমস্যা, যা নিয়ে থাকতে হয় শিক্ষার্থীদের।

নগরীর তালাইমারি, ডাসমারি, বুদপাড়া, রাণীনগর, দরগাপাড়া ও সবজিপাড়ার মেসগুলো নিয়ে এমন অভিযোগ সবচেয়ে বেশি। তবে, মেস মালিকদের দাবি, স্বল্পখরচে শিক্ষার্থীদের সেবা দেয়ার চেষ্টা করেন তারা। শিক্ষার্থীরাও নানা সংকট সৃষ্টি করছেন বলে অভিযোগ তাদের।

আরও পড়ুন:

মেস মালিকরা জানান, নিজের সন্তানের মতো তারা সেবা দিয়ে থাকেন। একটি মেয়ের পরীক্ষা যদি রাতে থাকে তাহলে তারা গিয়ে গাড়িতে তুলে দেন। আধুনিক সকল সুযোগ-সুবিধা দেয়া হয় মেসগুলোতে।

এ অবস্থায় মেস পরিচালনায় নীতিমালা প্রণয়ন, নিবন্ধন এবং এর সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিতের দাবি তুলেছে শিক্ষার্থী প্রতিনিধিরা।

রাকসু জিএস সালাউদ্দিন আম্মার বলেন, ‘মেস মালিকদের সঙ্গে বসবো। আমরাও চাই নিদিষ্ট একটি রুলসের মধ্যে তারা আসুক। অন্যথায় আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের যদি এ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে না পারি তাহলে এটি প্রশাসনের জন্য চরম ব্যর্থতা।’

শিক্ষার্থীদের নিরাপদ আবাসন ও শিক্ষাভিত্তিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে সমন্বিত উদ্যোগের কথা বলছেন শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষকরা।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক বলেন ড. মো. আমিরুল ইসলাম কনক বলেন, ‘বিশেষ কোনো সমিতি অথবা বিশেষ কোনো সংগঠন গঠন করতে পারি। সেই সংগঠনগুলো সরাসরি শিক্ষার্থীদের এ বিষয়গুলো মনিটরিং করবে। নিরাপত্তা থেকে শুরু করে মেস মালিক বনাম শিক্ষার্থী অসন্তোসগুলো তৈরি না হয়। এলাকাবাসীদের সঙ্গে যেন সুসম্পর্ক তৈরি হয় এ ব্যবস্থাওলো গ্রহণ করবে।’

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. ইলিয়াস হোসেন ছাত্র বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কলেজ কর্তপক্ষ এবং সিটি করপোরেশন এদের একটি বিশাল দায়িত্ব আছে। মাালিকপক্ষের সঙ্গে নেগোসিয়েশন ও অ্যাকাউন্টিবিলিটির মধ্যে নিয়ে আসা।’

৫ আগস্টের শিক্ষানগরী রাজশাহীতে মেস মালিক সমিতি গড়ে উঠলেও রাজনৈতিক পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ ছিলো । মেস পরিচালনা তদারকিতে তাই বিশ্ববিদ্যালয়, পুলিশ ও নগর কর্তৃপক্ষের অংশগ্রহণ চান শিক্ষার্থীরা।

এফএস